আসমানী কবিতার ঘরের দেখা মিলল বরুড়ায়!

৬বান টিন সংকটে থেমে আছে তার স্বপ্ন !

ইলিয়াছ হোসাইন||
হাজেরা বেগম। থাকেন পাখির বাসার মতো ঝুপড়ি একটি ঘরে। যেন কবি জসীম উদ্দিনের আসামানী কবিতার ঘর।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
তার স্বামী থেকেও নেই।আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্রে ঘর বেঁধেছেন। দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আরেক মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়েন। তিনি দিনমজুর হিসেবে অন্যের
জমিতে কাজ করতেন। নারী শ্রমিক হওয়াতে মজুরী পেতেন ২০০-২৫০ টাকা। এ টাকায় কোনো রকম দিন চলে যেতো।কিন্তু বর্তমানে তিনি কাজ করতে অক্ষম।দুর্ঘটনায় পায়ের অপারেশন হয়।এখন ভারী কাজ করতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবে হাটতেও কষ্ট হয়।
সন্তান নিয়ে জীবনযাপনে হিমশিম খাচ্ছেন।কোন রকম সরকারি সহায়তাও পাচ্ছেন না।ভাইয়ের দেওয়া ১ শতক জায়গায় নতুন একটি ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছেন।ধার-দেনা করে ঘরের কাঠ,পিলার গাড়তে পারলেও অর্থের অভাবে ঘরের চাল এবং বেড়ার টিন দিতে পারছেন না।মাঝপথে আটকে আছে হাজেরা বেগমের স্বপ্নের ঘর।মিস্ত্রির হিসেব অনুযায়ী উপরে-নিচে ৬বান টিন প্রয়োজন।মিস্ত্রির টাকাও তার জোগাড় নেই।বিত্তবানদের অথবা সরকারি কোন সহযোগিতা পেলে সম্পূর্ণ হবে থেমে থাকা হাজেরা বেগমের নতুন ঘর।
তিনি কুমিল্লার বরুড়া উজেলার ৪নং দক্ষিণ খোশবাস ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা।
হাজেরা বেগম বলেন, ভাঙা ঘরে থাহি,বৃষ্টি আইলে হানি হরে।বেড়া খুলি খুলি হরে।তাই ভাইয়ের দেওয়া ১শতক জায়গার মইধ্যে ধার-দেনা কইরা নতুন একখান ঘর ধরছি।কিন্তু এখন টাকার অভাবে টিন লাগাইতে হারিনা।মিস্ত্রি কইছে ছয়বান টিন লাইগবো।মিস্ত্রিরে টাকা দিতাম হারিনা দেইখা কামে আইয়েনা। হতিবেশি এক মহিলা চাল কিন্না দিছে এডি রান্না করি মিস্ত্রিরে খাওয়াই।টিয়ার(টাকা) অভাবে ঘরের কাম বন্ধ অই রইছে। খুব কষ্টে আছি।আমারে কেহ দেহার মতো নাই। সরকারি কোনো চাইল পাইনা। সহযোগিতাও পাইনা।ঘরের লাই চেয়ারম্যান, মেম্বারের কতজনের কাছে গেছি। কোন লাভ অয় ন।
প্রতিবেশী হোসনেয়ারা বেগম বলেন,হাজেরা বেগমের স্বামী নাই।মানুষের ক্ষেতে কাম কইরা খাইতো।তার এক পায়ে রড পড়ানো। এখন আর মনি-মজুরি দিতে পারেনা।সে খুব কষ্টে দিন যাপন করছে।টাকার অভাবে ঘরের কাজটাও মাঝ পথে বন্ধ হয়ে আছে।যতোটকু করেছে তাও বিভিন্নজন থেকে ঋণ এনে করেছে।
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নু-এমং-মারমা মং বলেন,আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে তো এখন টিন বরাদ্দ কম আসে। তারপরও আমি বিষয়টি দেখছি। বরুড়া উপজেলায় এমন আরো দুঃস্থ দু’জনকে টিন এবং নগদ অর্থ প্রণোদনা দিয়েছি। অসহায়,দরিদ্রের পাশে সর্বদা থাকার চেষ্টা করি। দরিদ্র হাজেরা বেগমের জন্যেও কিছু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।