কান্দিখাল ভরাটে বেড়েছে দুর্ভোগ

 

কুমিল্লা নগরীর সেই কান্দিখাল ভরাটে বাড়লো কুমিল্লা নগরীবাসীর দুর্ভোগ। দুই দফা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে নগরী। আমোদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ছয় মাস আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছিলো. নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রধান খাল কান্দিখাল ভরাট হচ্ছে। খালের একাংশ ভরাটে খালটি সরু ড্রেনে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে যেখানে নগরী ডুবে যায়, সেখানে পানি অপসারণ পথ স্বাভাবিক না থাকলে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করবে। সেই আশংকায় সত্যি হলো। এনিয়ে গত সপ্তাহে আমোদ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।


সেখানে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ ০৩জুলাই বৃষ্টিতে নগরীর স্টোডিয়াম এলাকা,লাকসাম রোড,রেইসকোর্স,চকবাজার,নিমতলী,হাউজিং এস্টেট,বাগিচাগাঁওসহ প্রায় সবকটি অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে নগরীর অন্তত ২লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়েন। বেশিরভাগ বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ে। ফ্রিজ, সোফাসহ ব্যবহৃত ফার্নিচার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ডুবে গেছে। জলমগ্ন হওয়ায় কুমিল্লা বিসিকে খাদ্য উৎপাদন, ওষুধ তৈরিসহ প্রায় সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড প্রাঙ্গণ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, টিঅ্যান্ডটি কার্যালয় প্রাঙ্গণ।

নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা যায়, ঘর থেকে পানি সেচে বের করছেন বাসিন্দারা। দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে। নিচু এলাকার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ডুবে ডুবে মাছ-তরকারি বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষাবোর্ড প্রাঙ্গণসহ কলোনি এলাকায় কোমর সমান জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাসায় পানি ঢোকায় প্রয়োজনীয় আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে।

একজন নগরবাসী বলেন, নগরীর অন্যতম উঁচু এলাকা বজ্রপুর ইউসুফ হাইস্কুল রোডে বাস করি। জীবদ্দশায় বাসায় কখনো পানি উঠতে দেখিনি। আজ ভোরে প্রথম দেখলাম। সাথে ড্রেনের মলমূত্র। যারা বলেন বৃষ্টি থামলে পানি চলে যায় কিংবা ঢাকা চট্টগ্রামের অবস্থা এর চেয়ে খারাপ তারা শাক দিয়ে মাছ ঢাকছেন। টানা একসপ্তাহের অতিবর্ষণেও বজ্রপুর এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি উঠেনি। উন্নয়নের জোয়ারে বাসার ভেতরে হাটু পানি। এমন উন্নয়ন আর চাইনা। আমাদের অবস্থা এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। হোল্ডিংট্যাক্স এর টাকা তিনগুণ বাড়িয়েও শান্তি হয়নি। যানজট জলজটে নাকাল করার ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে। এমন অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে জনগণের অর্থ বিনষ্টকারী জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিচার চাই।


আরেকজন বলেন, যত প্রয়াজনই হোক পুকুর,নদী,খাল বন্ধ করা যাবে না। বিশেষ করে কান্দিখাল নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রধান খাল। অল্প বৃষ্টিতে নগরী জলাবদ্ধ হয়ে যায়। এটি আরো প্রশ্বস্ত ও গভীর করা দরকার। সেখানে এটি ভরাট করা দুঃখজনক। ছয় মাসেই এই দুর্ভোগে পড়লো নগরবাসী।

এবার নগরীতে স্মরণকালের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি অপসারণের খাল সচল রেখে সড়কের কাজ করার প্রয়োজন ছিলো। রেলওয়েকে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমরা মনে করি, সাধারণ বৃষ্টিতে নগরী জলাবদ্ধ হয়। সেখানে খাল ভরাট হলে দুর্ভোগ বাড়বে সেটি সাধারণ কথা। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে জনস্বার্থে আরো আগেই জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত ছিলো। এখন খাল দখল মুক্ত করতে জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।