বাবার প্রতীক্ষা, সন্তানের যাত্রা

মো.ইমতিয়াজ আহম্মেদ।।
জীবনের চলার পথ কখনও আনন্দের রঙে রাঙা, আবার কখনও বিরহের ছোঁয়ায় ধূসর। কিন্তু প্রতীক্ষার শেষে মিলনের যে আনন্দ, তার তুলনা হয় না।

inside post

গত ৪ মে ২০২৪, যখন সাখাওয়াৎ হোসেন জামি কানাডার মন্ট্রিয়ালের কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার অব সাইন্স (এমএস) করতে ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস ফ্লাইটে যাত্রা করল, তখন হয়তো তার চোখে ছিল স্বপ্নের আলো, কিন্তু হৃদয়ের কোণে ছিল এক অদ্ভুত শূন্যতা। কারণ, মাত্র ৯ দিন আগে, ২৫ এপ্রিল, তার কোলজুড়ে এসেছিল এক খুশির ধ্রুবতারা-পুত্র সন্তান আব্দুর রহমান।

বাবা-ছেলের সেই প্রথম সাক্ষাৎ যেন ছিল স্বপ্নের মতো ক্ষণস্থায়ী , সে তখন বাবার মুখে আযান শুনেছিল। নয়টি দিনের স্নেহমাখা আলিঙ্গন, সেই ছোট্ট আঙুল ধরে বাবার আঙুল জড়ানোর মুহূর্তগুলো, সবকিছুই যেন সময়ের কাছে হার মানলো। জামি তখন স্বপ্ন বুনছিল সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার, আর আব্দুর রহমান অনুভব করছিল বাবার উষ্ণ স্পর্শের নিশ্চিন্ততা।

সময় থেমে থাকে না। এরই মধ্যে জীবন এগিয়ে গেছে আপন গতিতে। আদিবা আর আব্দুর রহমান কানাডার ভিসা পেয়েছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, কিন্তু আদিবার ছোট বোন আজুবার বিয়ের খুশির রেশ, আর কানাডার অতিরিক্ত তুষারপাতের কারণে যাত্রা পিছিয়ে যায়। অবশেষে, সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ-আল্লাহ চাইলে আগামী ৭ মার্চ ২০২৫, মা ও ছেলে যাত্রা করবে বাবার স্নেহভরা কোলে ফিরতে।

আজ আব্দুর রহমান ১০ মাস ২০ দিনের ছোট্ট এক প্রাণ। এই বয়সে বোঝার ক্ষমতা কতটুকু, তা বলা কঠিন, কিন্তু বাবার শূন্যতা যে সে অনুভব করে, তা তার ছোট ছোট আচরণেই স্পষ্ট। কাপড় গোছানোর সময় যখন তার মা লাগেজ প্রস্তুত করছিল, সে খেলা করতে করতে এক পর্যায়ে সেই লাগেজের মধ্যেই শুয়ে পড়ল! যেন বলতে চাইছে, “আমি প্রস্তুত, মা! আমাকে বাবার কাছে নিয়ে চলো!”

জামি প্রতিদিন প্রতীক্ষা করে সেই প্রথম হাঁটার দৃশ্য দেখার, প্রথম কথাটি শোনার, প্রথম ভালোবাসার আলিঙ্গন পাওয়ার। আর আব্দুর রহমানও হয়তো প্রতিটি দিন বাবার মুখের আদল কল্পনা করে, মায়ের কোলে মাথা রেখে বাবার গল্প শোনে।

এই প্রতীক্ষার শেষে, যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, ইনশাআল্লাহ ৮ মার্চ ২০২৫-এ বাবা-ছেলের সেই বহু প্রতীক্ষিত মিলন ঘটবে। হয়তো বিমানবন্দরে ছুটে গিয়ে বাবাকে দেখে তার মুখে ফুটে উঠবে অবাক হাসি, হয়তো বাবার বুকে মাথা রেখে প্রথমবারের মতো সে অনুভব করবে সেই স্নেহ, যা এখন পর্যন্ত কেবল গল্পে শুনেছে। জামি কানাডার তুষারপাতের ভেতর থেকেও ভিডিও কলে ছেলের মুখ দেখে শান্তি খুঁজত, যতদিন বাবার স্নেহ থেকে দূরে ছিল, ততদিন দাদা-দাদি, নানা-নানী, শুভাকাক্সক্ষী আর ফুফু, খালার ভালোবাসার পরশে বড় হয়েছে আব্দুর রহমান। তার ছোট্ট হাসি, কৌতূহলী দৃষ্টি, আর চঞ্চলতা তাদের হৃদয়ে গভীর আনন্দের ঝরনা বইয়ে দিয়েছিল-এখন সেই শূন্যতাই হয়তো চোখের জল হয়ে ঝরবে, আর প্রতিদিন মনে পড়বে তার স্নেহমাখা স্পর্শ।

মহান আল্লাহ তাদের ইচ্ছা পূরণ করুন, তাদের হৃদয়ের শূন্যতা ভালোবাসার সাগরে পূর্ণ করে দিন।

আমিন।

আরো পড়ুন