ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা চিকিৎসায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা
আরো পড়ুন:
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
হাসপাতালে নেই কোনো সিসিইউ বেড, হাই ফ্লু নেজাল ক্যানোলা। দুই শতাধিক রোগিকে অক্সিজেন দেওয়ার লক্ষ্যে প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তিন মাসেও শেষ হয়নি লিক্যুইড অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ। কত টাকার কাজ, কত দিনে কাজ শেষ হবে- এসবের কোনো তথ্যই নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। এই নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা কমিটির সভায়ও হয় বিস্তর আলোচনা। এদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে রোগীদের অবস্থা শোচনীয়। করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় চরম বিশৃঙ্খল তথা হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এহেন চিত্র আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা তথা আশপাশ এলাকার অন্তত ৩৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার ভরসাস্থল আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এটি বহুমাত্রিক সমস্যায় কাতর। হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার কোভিড ওয়ার্ড নতুন করে বেড বসানো হয়েছে। তবে তা কাগজপত্রেই সীমিত। বাস্তবে শয্যা আছে কেবল ৩০টি। হাসপাতাল কর্মকর্তারা বলেন, ২২০ জন রোগীকে এখান থেকেই অক্সিজেন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে গত তিন মাস আগে শুরু হওয়া সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে ঢিমেতালে। কত টাকার কাজ, কত দিনে তা শেষ হবে এসবের কোনো তথ্যই নেই হাসপাতালে। গত ৪ জুলাই হাসপাতাল স্বাস্থ্য সেবা কমিটির বৈঠকেও এই হয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। তাছাড়া এই হাসপাতালে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় চলছে নানান ধরণের অব্যবস্থাপনা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে বাইরের লোকজন গিয়ে ওয়ার্ডে প্রবেশ করছে। মেঝেতে ময়লা। নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। দীর্ঘদিন যাবৎ জেনারেটর বিকল থাকায় আইসোলেশন ও হাসপাতালে নির্ধারিত ওয়ার্ডে থাকা রোগীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। লোড শেডিংয়ের প্রভাব পড়ছে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগির সাথে থাকা সালাহউদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীরা সঠিকভাবে অক্সিজেন পাচ্ছেন না। এতে জীবনের ঝুঁকির পাশাপাশি ভীত সন্ত্রস্ত রয়েছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। চিকিৎসক ওয়ার্ডে যেতে চান না। হাসপতালের একজন চিকিৎসক জানান, বর্তমানে ২২টি সিলিণ্ডার দিয়ে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে অক্সিজের সরবরাহের কাজ চললেও পরিস্থিতির অবনতি হলে তা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। কোভিড ওয়ার্ডে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়ত নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স এণ্ড পেনডেমিক প্রিপারনেস প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ছয় হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন কাজ চলমান। কাজটি করছে ‘স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল’ নামের প্রতিষ্ঠান। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহের পরিচালক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেন। অথচ কাজের সার্বিক বিষয় সম্পর্কে আর কিছুই জানেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কাজ কবে শেষ হবে, কাজ কি হবে- সবই অজ্ঞাত। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ফাহমিদুর রহমান শাকিল জানান, ‘প্ল্যান্ট রুম বানানোর কাজ হচ্ছে। জুলাই বা আগষ্টের প্রথমে লিক্যুয়িড ট্যাঙ্ক বসানো শেষ হবে।’
আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ওয়াহীদুজ্জামান জানান, ‘অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের পর রোগীদের সমস্যা আনেকটাই সমাধান হবে। ২২০ জন রোগিকে এখান থেকেই অক্সিজেন দেওয়া যাবে। অক্সিজেন লাইন এবং দেড়শ’ আউটলেট পয়েন্ট বসানো হয়েছে।’
সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ্ বলেন, ‘নতুন করে আরো ৫০টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভারতের সীমান্তবর্তী এ জেলায় করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হতে থাকলেও করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালে সরঞ্জামাদির ঘাটতি রয়েছে। উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা নেই। আক্রান্ত রোগীর ফুসফুস কত শতাংশ সংক্রমিত হয়েছে, সেটি জানার জন্য সিটি স্ক্যান ও পোর্টেবল এক্স-রে সুবিধাও নেই। তাই আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাদেরকে ঢাকায় রেফার ছাড়া উপায় নেই। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে সিকিৎসা সেবায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।জেলায় এ পর্যন্ত চার সহস্রাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭১ জনের। আর সুস্থ হয়েছে তিন হাজার ৮৪০ জন।’