-বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন। কুমিল্লার বৃহত্তর কোতয়ালী থানার মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে প্রশিক্ষণ দিতে অস্ত্র পাইনি। বাঁশ , কাঠ ও ডেমি রাইফেল দিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তারুণ্যের সেই দিন গুলো এখনও স্বপ্নের মতো মনে হয়। ৬৯সালে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করি। তখন রক্ত গরম। এখন জীবনের জন্য যত মায়া তখন এত ছিলো না। সব জায়গায় এগিয়ে থাকতাম। আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের আয় বেশি,কিন্তু বরাদ্দ বেশি পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য। সেনাবাহিনীতে আমাদের একজন আর তাদের ১০জন সুযোগ পায়। দেশের প্রতি বৈষম্য মানতে পারি না। কুমিল্লা নগরীর ইউসুফ হাই স্কুল ও ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্র রাজনীতি করেছি। আমরা এক ভাই এক বোন। সারা দিন আন্দোলন সংগ্রাম এগুলো নিয়ে থেকেছি। পরিবারকে সময় দেইনি। তখন রাজনীতিবিদ হাবিবুল্লাহ চৌধুরী, সৈয়দ রেজাউর রহমান, অধ্যক্ষ আফজল খান, অধ্যক্ষ আবদুর রউফ, মফিজুর রহমান বাবলু ভাইয়েরা ছিলেন আমাদের সিনিয়র। তাদের সাথে চলতাম। আমাকে মুক্তিযুদ্ধকালীন কুমিল্লার সর্ব দলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির ১১জনের মধ্যে রাখা হয়। ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি শাহ আলম ছিলেন সেই কমিটির আহবায়ক।
আবদুল মতিন বলেন,তার বাড়ি ভারত সীমানার কাছে কুমিল্লা সদর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে। বাবা ছলিম উদ্দিন। মা করফুলের নেছা। বাবা পরিবহন সেক্টরে কর্মরত ছিলেন। পরিবারে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন কম ছিলো।
২৫মার্চ রাতের বর্ণনায় তিনি বলেন,তখন আমরা নগরীর মোগলটুলীতে। কেরোসিনের ড্রাম দিয়ে সড়ক ব্যরিকেড দেই। সাম বকশি কাঠের ব্রিজে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেই। ওই সড়কে যেতে সবাইকে বলি গাছ কেটে সড়ক বন্ধ করে দিতে। যেন পাকিস্তানি আর্মিরা বাধাপ্রাপ্ত হন।
আবদুল মতিন বলেন,২৭মার্চ আমরা ভারতের সোনামুড়া চলে যাই। সেখান থেকে ওম্পিনগর ট্রেনিং সেন্টারে যাই। মতিনগর,বক্সনগর,হাতিমারা যুব শিবিরে থেকেছি। ২নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ। মেলাঘরে ছিলো এর হেডকোয়ার্টার। আমরা ২নং সেক্টরের অধীনে ছিলাম।
যুদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন,তার টিম বিভিন্ন স্থানে গেরিলা হামলা করতো। তারা মারতো আর পালিয়ে যেতো। এতে পাকিস্তানিরা তটস্থ থাকতো।
মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন,আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সময় নেতৃত্বে দিয়েছে। তবে সব দল মতের মানুষ জীবন দিয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ডাকে যুদ্ধে যাই। তবে দেশের ক্রান্তিলগ্নে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তার ডাক আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। অথচ তাকে নিয়েও কেউ কেউ বাজে কথা বলেন। কাউকে সম্মান দিলে কেউ ছোট হয় না,বরং বড় হয়।
তিনি বলেন, ভিন্নমতের হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বঞ্চিত করা হয়। বিভিন্ন আয়োজনে ডাকা হতো না। আওয়ামী লীগের গত ১৬বছরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়েছে। তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করতে পারেনি। অনেক এমপি মন্ত্রীরা নিজেদের স্বজনদের ধরে এনে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন।
৭৬বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন বলেন, স্বাধীনতার যুেদ্ধ অংশগ্রহণ তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। তিনি চান ভূখন্ডের স্বাধীনতার মতো দেশের মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি পাক। মানুষ আনন্দে থাকুক।
-মহিউদ্দিন মোল্লা।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com