অঝরে কাঁদলেন বীরপ্রতীক বাহার ভাই!

 

।। আনিছুর রহমান মিঠু।। 

আজ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহাউদ্দীন রেজা বীরপ্রতীকের কাছে শুনলাম তাঁর উপর ঘটে যাওয়া বিভীষিকাময় করুণ কাহিনী !!

আমার ধারণা ছিলো চৌদ্দগ্রামের সাবেক মেয়র মিজানের সমাবেশে গিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় হয়তো তিনি সামান্য আহত হয়েছিলেন। কিন্তু আজ শুনলাম করুণ এক কাহিনি।

তাঁর গাড়ি ধাওয়া করে কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে মটর সাইকেল বাহিনি ধরে ফেলেন তাঁকে। তারপর ভিডিও কলে নেতাকে দেখানো হয় এই লোক সেই লোক কিনা। নেতা বললেন হ্যা এটাই বীরপ্রতিক।

এরপর তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এক বিল্ডিংয়ে। উপুর্যুপরি পিটানো হয় এই বৃদ্ধ মানুষটিকে।ভাগ্য ভালো যে, উনি বেঁচে আছেন।শারীরিক কাঠামো ভাল থাকায় সহ্য করতে পেরেছেন।

কুমিল্লার উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে বড় নেতা বাধ্যহয়ে তাঁকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন তাঁর হুন্ডা বাহিনীর কর্মীদের।

এই মানুষটি বঙ্গবন্ধুর সহচার্য পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ছিলো অসামান্য অবদান।যুদ্ধে আহত হয়েছেন।পেয়েছিলেন বীরপ্রতীক খেতাব।

জীবনে এক দিনের জন্যও এ মানুষটি আদর্শচ্যুত হননি।কুমিল্লার রাজপথে ছিলেন সকল আন্দোলন সংগ্রামে।

জেলা আওয়ামী লীগের সকল কমিটিতেই তাঁর নাম ছিলো। এবার নেই। তাঁকে করা হয়েছে ২০ নাম্বার উপদেষ্টা, উপরের ১৯ জনকেই তিনি চিনেনও না!!

আবেগাপ্লুত হয়ে আমাকে ধরে অঝরে কাঁদলেন বীরপ্রতীক বাহার ভাই। বল্লেন- উনশত্তুরের আন্দোলন, ৭মার্চের আগে পরের অনেক ঘটনা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা।

আর জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজ দলের কর্মীদের হাতে মারাত্মক ভাবে অপমানিত ও লাঞ্চিত নির্যাতিত হওয়ার কাহিনী।

বহুবার বহু আন্দোলনে জামাত বিএনপির মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তাঁকে একা পেয়েও গায়ে হাত তুলেনি জামাত বিএনপির লোকেরাও। অথচ দলের এই চরম সুদিনে তিনি আজ নিজ দলের কর্মীদের হাতে নির্যাতিত।

কাঁদতে কাঁদতে বলেন,কি মোনাফেক বেইমানের সাথে জীবনটা ব্যায় করলাম! এতটা অমানুষ ও নিষ্ঠুর হয় কিভাবে একজন নেতা! কিভাবে মানুষ এতো নিচে নামতে পারে!!

কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ বহুনেতা তাঁকে দেখতে গিয়েছেন হাসপাতালে। হাসপাতালেই পেলাম চৌদ্দগ্রাম আঃলীগের প্রভাবশালী নেতা তমিজ উদ্দিন সেলিম, খন্দকার শরিফ আহাম্মেদ,জাফর চৌধুরীসহ অনেককে।

উপরে উঠেই পেলাম শ্রীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহ জালাল মজুমদারসহ বেশ কিছু নেতাকে। সবাই ক্ষুব্ধ একজন বয়োবৃদ্ধ ও বীরপ্রতীকের এই অপমান দেখে।

বীরপ্রতীক এই শ্রদ্ধেয় মানুষটিকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি আমি। তবে তিনি নিশ্চয়ই নেত্রীর সাথে দেখা করবেন।একমাত্র নেত্রীই তাঁকে হয়তো সান্ত্বনা দিতে পারবেন।

বাহার ভাইয়ের সুস্থতা ও দীর্ঘ হায়াত কামনা করছি।

লেখক : সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক,  মহানগর আওয়ামী লীগ।