মাহফুজ নান্টু
রিক্সায় করে পরিবার নিয়ে বের হয়েছেন। কেউবা প্রিয়তমাকে নিয়ে। কারো মাথায় লাল টকটকে গোলাপ। কেউবা রজনীগন্ধা হাতে। লাল শাড়ি আর হলুদ পাঞ্জাবিতে মোহনীয় হয়ে উঠেছে নগরীর অলিগলি। ফুলের দোকানে ভীড়। তারচেয়ে বেশী ভীড় অবকাশ যাবন কেন্দ্রে। এতসবের মাঝে নিম্ন আয়ের মানুষজন প্রানন্তকর চেষ্টা করছিলেন তাদের দিনের আহার জুটানোর জন্য। সকাল থেকে কুমিল্লা নগরীতে এমন দৃশ্য ছিলো খুবই সাধারণ। তবে এত সব সাধারণ দৃশ্যর মাঝে অসাধারণ হয়ে উঠেছিলো নিম্ন আয়ের মানুষজনের সাথে কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষের ভালোবাসা বিনিময়।
ভালোবাসা দিবসে ফুল, মিষ্টি ও নগদ টাকা উপহার দিয়েছে ননগরীর নিম্ন আয়ের মানুষজনকে। যাদের মধ্যে মুচি, সুইপার , ভিক্ষুক , রিক্সাওয়ালা ও ফেরীওয়ালা ছিলো। প্রথম আজ বসন্তে তাজা গোলাপ ও রজনীগন্ধার সাথে কিছু নগদ টাকা পেয়ে আপ্লুত হয়েছেন তারা। যেখানে তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সেখানে কেউ এসে তাদের হাতে লাল গোলাপ ও কিছু নগদ টাকা দেয়া তাদের কাছে স্বর্গীয় মনে হয়েছে
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ঠিক এভাবেই নিম্ন আয়ের মানুষকে ভালোবাসার বাহুডোরে আবদ্ধ করেছেন কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তার। দিনভর তিনি সাধারণ মানুষকে ভালোবাসা দিয়েছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন একবুক ভালোবাসা ও দোয়া।
নগরীর কান্দিরপাড়ে জুতো সেলাই করেন কার্তিক দাশ। মঙ্গলবার ভালোবাসা দিবসে বেলা ১১ টা পর্যন্ত মাত্র ৫০ টাকা আয় করেছেন। পরিবারের খাবারের খরচ নিয়ে চিন্তিত কার্তিক দাস চেয়ে আছেন মানুষের পায়ের দিকে। কার জুতো ছেড়া কিংবা রং উঠে গেছে। সেই একজোড়া জুতো মেরামত করে আরো কিছু টাকা আয় করবেন। পরিবারে স্ত্রী সন্তানসহ ৪ জন আছে। দিনভর যা আয় করেন তা দিয়ে কোন রকম চলে। তবে আজ খুব বেশী আয় না করতে পারলেও মনে অনেক শান্তি পেয়েছেন ৪০ বছর বয়সী কার্তিক। কেউ একজন তার মাথায় হাত বুলিয়েছে। ফুল দিয়েছে। সাথে কিছু টাকাও।
কার্তিক বলেন, মাইনষের মুখে হুনি বালোবাসা দিবস। এইডা আমি বুঝি না। আমার বউডারেও কোন দিন একটা ফুল দিছিনা। আইজ বাক্সডা লইয়া বইছি। আৎকা একটা মেডাম আইয়া আমার সামনে খাড়াইলো। আমি মনে করছি জুতাডি সেলাই করবো। পরে দেহি আমারে ফুল দিছে মিষ্টি দিছে। খামো কইরা কয়ডা টেকাও দিছে। আইজকার দিনডা আমার মনে থাকবো। বাইত গিয়া বউয়ের কাছে কমু। কার্তিকের খুশির যেন শেষ নেই।
কার্তিকের মত এমন অন্তত ২৫-৩০ জন নিম্ন আয়ের মানুষের হাতে ফুল মিষ্টি ও খাম দেয়া হয়েছে। সবারই চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক।
ভালোবাসা দিবসে ব্যতিক্রম এমন আয়োজনের অনুভূতি ব্যক্ত করে কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তার বলেন, ভালোবাসা দিবসটা আসলে ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না। এটা অবারিত। এটা সীমাহীন। ভালোবাসায় থাকবে শ্রেনী বৈষম্য। সবার জন্য সবার ভালোবাসা। সেই ধারণা থেকে আমি আমার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সহকর্মীদের নিয়ে ঘুরে ঘুরে নগরীর বিভিন্ন সড়কে ও জনবহুল জায়গায় গিয়েছি। সেসব স্থানে নিম্ন আয়ের মানুষজনের সাথে ভালোবাসা বিনিময় করেছি। ওই মানুষগুলোর মুখের হাসি ও দোয়া পেয়েছি। এই ভালোবাসার তুলনা হয় না। চমৎকার এক অনুভূতি নিয়ে দিন পার করেছি।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com