অবশেষে আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু

 

মো. ফজলে রাব্বি, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)।।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধায় দীর্ঘ  আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে প্রকল্পের কাজ ফের শুরু হয়েছে।

রোববার (১২ মার্চ)  বিজিবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম কসবায় প্রকল্প পরিদর্শনের পর কসবা রেলস্টেশন, রেলপথ ও সালদা রেলসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

দুই দেশের সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর কাজ হচ্ছে এমন অজুহাতে বিএসএফের বাধার মুখে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে কসবা রেলওয়ে স্টেশন ও সালদা নদীর রেল ব্রিজ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ পুনরায় চালু হওয়ায় কসবা সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

স্থানীয়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের  ব্রা‏হ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলজংশ থেকে লাকসাম রেলজংশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইনের কাজ চলছে। আখাউড়া থেকে শশীদল পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ, ছয়টি রেলওয়ে স্টেশন, ব্রিজ কালভাট তৈরি করতে কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপ।

ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথের ডাবল লাইনে নির্মাণ করতে কসবা রেলওয়ে স্টেশন ও সালদানদী রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু করে রেললাইন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাবল লাইন আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেছেন।  কিন্তু কসবা রেলওয়ে স্টেশন ও ডাবল লাইন এবং সালদানদীতে রেল ব্রিজটি  সীমান্তের শূন্যরেখার  দেড়শ গজের ভেতর কাজ হচ্ছে এমন অজুহাতে বিএসএফের বাধার মুখে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

রোববার নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সরাইল রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ।

এসময় সুলতানপুর ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিক হাসান উল্লাহ, প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সুবক্ত গীনসহ বিজিবি ও রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রোববার কসবা রেলস্টেশন এলাকায় নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে বিজিবি কমান্ডার সাংবাদিকদের বলেন, ৭২ কি.মি দীর্ঘ আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে প্রকল্পটি আমাদের জাতীয় পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হলেও কসবা ও সালদা স্টেশনের অবস্থান সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে হওয়ায় আন্তর্জাতিক আইনের অজুহাতে বিএসএফ এর বাধায় গত ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে ঢাকায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে সীমান্ত সম্মেলনে বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে প্রকল্পটি চালুর বিষয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১ মার্চ বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান সরেজমিনে আখাউড়া-লাকসাম রেলপথের কসবা রেলস্টেশন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি প্রকল্পটির বন্ধ থাকা কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরই ফলশ্রুতিতে দেশের অন্যতম জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে এটি দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ নির্মাণকাজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হলে জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ২৩ জোড়া ট্রেন চালু রয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে এই পথে ৭২ জোড়া ট্রেন চলাচল করতে পারবে।