অবশেষে উৎসবমুখর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচারাঙ্গন

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।।
অবশেষ স্বস্তি ফিরলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারাঙ্গনে। দীর্ঘ জটিলতার ঘটলো অবসানে সকল আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নিয়েছেন আইনজীবীরা।মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরেছে আদালত অঙ্গনে। নারী ও শিশু-১ আদালতের বিচারক ছুটিতে যাওয়ায় বর্জনের আওতাভূক্ত এই আদালতের কার্যক্রমেও অংশ নেন আইনজীবীরা। জেলার ২২ টি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম হয়ে ওঠেছে স্বাভাবিক হয়ে ওঠায় বিচারপ্রার্থীদের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি। চিরচেনা রূপে ফিরেছে জেলা জজ আদালত ও চীফ জুডিসিয়াল আদালত অঙ্গন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান চৌধুরী কানন জানান, আদালতের অচলাবস্থা নিরসনে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রোববার স্থানীয় সার্কিট হাউজে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আইন সচিব গোলাম সারোয়াসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আইনজীবীদের বৈঠক হয়। বৈঠকে তাদের প্রদত্ত আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সোমবার ১৩ ফেব্রুয়ারী বিশেষ সাধারণ সভা করে নারী ও শিশু-১ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক ছুটিতে না যাওয়া পর্যন্ত ওই আদালত ব্যাতীত সকল আদালতের উপর থেকে বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে নারী ও শিশু-১ আদালত এর বিচারক ছুটিতে চলে যাওয়ায় সে আদালতের দায়িত্ব পালন করছেন নারী ও শিশু-৩ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলম। আর সেক্ষেত্রে আইনজীবীদের কোনো সমস্যা না থাকায় তারা নারী ও শিশু-৩ আদালতেই নারী ও শিশু-১ আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নেয়া শুরু করেন। এতে সকল আদালতের কার্যক্রমে আইনজীবীরা অংশগ্রহণ করায় জেলার ২২ টি আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। এছাড়াও আইনমন্ত্রী জেলা জজের বিষয়ে নমনীয় হতে বলায় সাধারণ সভায় সে বিষয়টিও বিবেচনা করে আইনজীবীরা সে আদালত থেকে বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়ায় আর কোনো জটিলতা থাকছে না।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয়। এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি আদালত অঙ্গনে কর্মবিরতি পালন করেন বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়শন। এহেন অবস্থায় জেলা জজ শারমিন নিগার, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক এবং আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। একপর্যায়ে আইনমন্ত্রীর আশ্বাসে জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত বর্জন অব্যাহত রেখে বাকি সব আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেয় আইনজীবীরা। তবে ৭ ফ্রেব্রুয়ারি ষষ্ঠ দফায় বাড়ানো কর্মসূচির শেষ দিনেও তাদের অপসারণ না করায় আবারো সব আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয় আইনজীবীরা। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকল আদালত বর্জন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হলেও সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নাজির মোমিনুল ইসলামের চাঁদপুরে বদলী ও নারী ও শিশু-১ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক ছুটিতে যাওয়ার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সকল আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নিতে শুরু করেছেন আইনজীবীরা।