আখাউড়ায় ৫ বছরেও চালু হয়নি বায়োমেট্রিক হাজিরা

 

নষ্টের পথে লাখ লাখ টাকার মেশিন

মো. ফজলে রাব্বি, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)||
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা শুরু হয় ২০১৯ সালের মাঝামঝি সময় থেকে। এসব বায়োমেট্রিক ডিভাইস কেনার উদ্দেশ্য ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত নিশ্চিত করা। ডিজিটাল হাজিরা মেশিনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। কোন বিদ্যালয়ের শিক্ষক কখন বিদ্যালয়ে আসবেন সেটি তারা অফিসে বসেই জানতে পারবেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরেও চালু করা সম্ভব হয়নি এসব ডিজিটাল মেশিন। চালুর আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে জলে গেলো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার সরকারি লাখ লাখ টাকা।

জানা যায়, ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দ থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের নির্দেশনা ছিল। নির্দেশনা অনুযায়ী সব বিদ্যালয়ে মেশিন স্থাপন করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর থেকে মেশিন নষ্ট হতে শুরু করে। যদিও নষ্ট মেশিন মেরামত করা হয়নি। এভাবে অনেক বিদ্যালয়ের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অবাক করার বিষয় হলো-এসব মেশিন স্থাপনে ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ব্যয় দেখানো হয়েছে দ্বিগুণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, আমাদের উপজেলাতে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে পূর্ণ মেশিন সেট আপ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে দেয়া বিলপত্রে ডিভাইস, ডোমেইন, হোস্টিং, সিম ও বিভিন্ন ইস্যুতে অর্ধেক টাকাই নয়ছয় ব্যয় দেখানো হয়েছে। অথচ বিবরণীর অনেক কিছুই এখনও অনেক বিদ্যালয় বুঝে পায়নি। ইন্টারনেট বাবদ বাৎসরিক চার্জও নেয়া হয়েছে বিদ্যালয় থেকে। অথচ ইন্টারনেট সংযোগই দেয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আখাউড়া উপজেলার ৫৪টি বিদ্যালয়েই ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা সম্পন্ন হয় ২০১৯ সালের শেষের দিকে। প্রতিটি মেশিন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ক্রয় করা হয়। সেই হিসাবে উপজেলাতে প্রায় ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা হয়েছে। সে সময় এই মেশিন কেনা নিয়ে নানা প্রশ্নও ওঠে। বাজার ছাড়া বেশি দামে দুইটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মেশিনগুলো কেনা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, করোনা মহামারীতে দীর্ঘদিন প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো বন্ধ থাকার কারণে মেশিনগুলো কে আর সচল করা হযনি। দীর্ঘদিন অকেজো থাকার কারণে প্রাযই বিদ্যালয়ের মেশিনগুলি নষ্ট হয়ে গেছে। মেশিনগুলো আবার সচল করার জন্য আমরা যোগাযোগ করছি।
আখাউড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় করার জন্য আলাদা কোন বাজেট ছিলো না। প্রতিটা সরকারি বিদ্যালয়ে প্রতি অর্থবছরে উন্নয়ন-সংস্কারের জন্য সরকার কিছু অর্থ বরাদ্দ দেয়। সে টাকা থেকে মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। মেশিন ক্রয়ের দায়িত্ব শিক্ষা অফিস নেয়নি। শিক্ষকরা সমন্বয় করে দুইটি কোম্পানি থেকে ক্রয় করেছে। আমার জানামতে মেশিন কোন স্কুলেই খারাপ হয়নি, আসলে শিক্ষকরা এই মেশিন ব্যবহারে আগ্রহী নয়। তবুও যদি কোন স্কুলে মেশিন অচল থাকে সে মেশিনগুলি সচলসহ ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিতে শীঘ্রই নির্দেশনা দেওয়া হবে।

উল্লেখ ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি সভায় সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকাসহ নানা জটিলতার মারপ্যাঁচে পড়ে এসব বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন চালু করা যায়নি।