মো.ফজলে রাব্বি,আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ।।
টাকা ও রূপির বিপরীতে ডলারের ঊর্ধ্বগতির কারণে মন্দাভাব বিরাজ করছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানিমুখী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। বিগত অর্থবছরগুলোর তুলনায় ভারতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কমেছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে আমদানি বাণিজ্য। ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদা মতো পণ্য আমদানির সুযোগ না পাওয়ায় বন্ধ রেখেছেন পণ্য আমদানি কার্যক্রম। এতে তলানিতে ঠেকেছে সরকারের রাজস্ব আদায়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে সব ধরনের পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। তবে বিপরীতে আমদানি করা যায় নির্ধারিত কিছু পণ্য। যার মধ্যে আছে- গবাদি পশু, মাছের পোনা, চুনাপাথর, চাল, ভুট্টা, গম, আদা, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আগরবাতি, পান, টমেটো, বিটুমিন, ফ্লাই অ্যাশ, মার্বেল চিপস, ফায়ার ক্লে, ভাঙা কাঁচ, জেনারেটরসহ ৫০টির বেশি পণ্য। তবে এর মধ্যে বেশিরভাগ পণ্যের চাহিদা না থাকায় আমদানি করেন না ব্যবসায়ীরা। কিছু পণ্যের চাহিদা থাকলেও ত্রিপুরার আশেপাশের রাজ্য থেকে আমদানি করে ভালো মুনাফা করতে না পারায় সেগুলোও আমদানি বন্ধ রয়েছে।
এদিকে বিগত অর্থবছরগুলোর তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। মূলত ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে কিছুটা ভাটা পড়ে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে পরের বছর মহামারির ধকল কাটিয়ে আবারও চাঙা হতে থাকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। তবে নতুন করে রপ্তানি বাণিজ্যে আবারও সংকট তৈরি করছে ডলার ঊর্ধ্বগতি। রূপির বিপরীতে ডলারের ঊর্ধ্বগতিতে আমদানি খরচ বাড়ায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য নেওয়া কমিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ মার্কিন ডলার ভোজ্য তেল, সিমেন্ট, বরফায়িত মাছ ও প্লাস্টিকসহ কয়েকটি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয় ৬৯৭ কোটি ৭০ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ টাকার পণ্য। একই সময় ভারত থেকে আমদানি হয় ১ কোটি ৯ লাখ ৯২ হাজার ২১৮ টাকার পণ্য। এ থেকে সরকারের রাজস্ব আসে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৮ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৬৮০ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৪ টাকার পণ্য। বিপরীতে আমদানি হয় ২৮৮ কোটি ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৮ টাকার পণ্য। এ থেকে সরকার রাজস্ব পায় ৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১০ টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৩২১ কোটি ২০ লাখ ৭৬ হাজার ৬৪৯ টাকা। আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার ৫১৪ টাকার পণ্য। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৫ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৯ টাকা।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় ১ বছর ধরে গম আমদানি করতে পারছেন না তারা। গত বছরের ৩০ মে’র পর গমের আর কোনো চালান আসেনি বন্দরে। পরবর্তীতে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ২ হাজার ৭০০ টন চূর্ণপাথর এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহে ৩৮ টন ভাঙা পাথর আমদানি হয়। এরপর আর কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। যেসব পণ্য আমদানির অনুমতি আছে, তার বেশিরভাগই ত্রিপুরার বাইরের রাজ্য থেকে আনতে হয়। এতে আমদানি খরচ বেড়ে যায়। এছাড়া এখন ডলার সংকটের কারণে চাহিদা মতো এলসিও করা যাচ্ছে না।
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, কখন কোন পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে-সেটি আগে থেকে বলা যাবে না। সেজন্য সব পণ্য আমদানির অনুমতি প্রয়োজন। যাতে করে যখন যে পণ্যের চাহিদা থাকবে, তখন যেন সেই পণ্য আমদানি করা যায়। যদি এ সুযোগটি দেওয়া হয়-তাহলে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে। পাশাপাশি আমদানি না হওয়ায় এখন বন্দরে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, সেটি কেটে গিয়ে বন্দর আরও চাঙা হবে।
এ বিষয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বিগত অর্থবছরগুলোর তুলনায় এবার রাজস্ব আদায়য়ের পরিমাণ একেবারেই কম। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান স্থলবন্দর পরির্দশনে আসলে ব্যবসায়ীরা সুনির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্যের তালিকা দেন আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। রাজস্ব বোর্ড থেকে তালিকার পণ্যগুলো আমদানির অনুমতি দিলে আবারও বন্দর দিয়ে আমদানি বাড়বে বলে আশা করছি। আর আমদানি বাড়লে বন্দর এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com