মো.ফজলে রাব্বি,আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
শরতের প্রধান আকর্ষণ কাশফুল। আর কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। শ্বেত শুভ্র কাশফুলের নরম পালকে চড়ে মেঘের দেশে হারিয়ে যেতে কার না মন চায়? নীল আকাশের নিচে সাদা কাশফুল যখন বাতাসের দোলায় দুলতে থাকে তখন মনটাও যেন আন্দোলিত হয়। মনে হয় শ্বেত বসনা এক ঝাঁক তরুণী যেন নৃত্য করছে।
বাংলা সাহিত্যে শরৎ ও কাশফুলের কথা এসেছে নানাভাবে। শরৎ ও কাশফুলের বন্দনা তাই তো কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায়, কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার কি অপার সৃষ্টি। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন গ্রন্থ কুশজাতক’র কাহিনি অবলম্বন করে শাপমোচন নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন। কবি জীবনানন্দ দাশ শরৎকে দেখেছেন এভাবে,বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। শরতের অপরূপ এই রূপ দেখে মুগ্ধ কবি অবলীলায় পৃথিবীকে আর দেখার প্রয়োজন মনে করেননি।
ছয় ঋতুর বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুর রয়েছে আলাদা রূপ ও বৈচির্ত্য। আর তাই প্রকৃতির ধারাবাহিকতা শরত এসেছে তার অপরূপ নিজস্বতা নিয়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর ধারে বাতাসে শুভ্র কাশ ফুলের দোল আর আকাশে সূর্যের সাথে সাদা মেঘের শরত এর আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের চোখে জুড়ানো এই অপরূপ সৌন্দর্য মন কাড়ছে সবার। তবে বৈশ্বিক উষ্ণতা আর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে ধীরে ধীরে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার চিরচায়িত রূপ ।
জেলার কাউতলী মোড় এলাকার দক্ষিণ পাশে ডিসি প্রজেক্ট নামে পরিচিত এলাকা ঢেকে গেছে কাশফুলে। সড়ক দিয়ে আসা যাওয়া পথচারিদের মন কাড়ছে সেই কাশফুল। সদর উপজেলার সুলতানপুর এলাকার বিজিবি ব্যাটালিয়নের পাশেই দুল খাচ্ছে কাশফুল। জেলার বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের ভেতরে থাকা থোকা থোকা শুভ্র কাশফুলের মেলবন্ধন মন কাড়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের। ঝকঝকে নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা অথবা কখনো কালো মেঘের মাঝ থেকে সূর্যে ঝিলিক আর শ্বেত শুভ্র কাশ ফুলের শোভা সবই জেনো শরত এর আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছে।
এভাবেই প্রতি বছর ফিরে আসে শরত, বাংলার প্রকৃতিকে করে তোলে রূপময়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সবকটি উপজেলায় কম বেশি শরতের কাশফুল ফুটেছে।কাশফুল দেখতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, সবার কবিতায় শরত ফিরে এসেছে। সাদা মেঘের সঙ্গে এই কাশফুলের সাদা রঙ মনকেও সাদা করে দেয়।প্রকৃতির কাছ থেকে একটু প্রশান্তি পেতে যায়গা গুলোতে মানুষের ঢল। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে দর্শনার্থীরা আসছে শরতের এই রূপ উপভোগ করতে।
তারা বলেন, শরত আসে সৌন্দর্য নিয়ে আর সেই সৌন্দর্য কাশফুল ছাড়া পূর্ণতা পায় না। এখানকার কাশবনের এই পরিবেশ যে কারও মনকে উদ্বেলিত করে। শেষ বিকেলের আলো আর মৃদু হাওয়ায় দোল খাওয়া সাদা কাশ ফুল এই দুয়ের মেলবন্ধনে গোধূলির লাল সূর্য যখন অস্তাচলে তখন প্রকৃতি হয়ে ওঠে আরও মায়াবী। তবে বৈশ্বিক উষ্ণতা আর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে বাংলার প্রকৃতির ঋতুগুলো হারাচ্ছে তার রূপ, রং আর বৈচির্ত্য। শরতকাল অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে সাধারণত কাশফুল ফুটে। তাই কাশবন বেড়ানোর জন্যে উপযুক্ত সময় তখনই। তবে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে কাশফুলের দেখা বেশি পাওয়া যায়।
রোমানিয়ার আদি নিবাসী কাশফুল বেশ প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে শুভ্রতা ছড়িয়ে আসছে। কাশফুল মূলত ছন গোত্রীয় একধরনের ঘাস। ঘাসজাতীয় উদ্ভিদটি উচ্চতায় সাধারণত ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ বেশ ধারালো। নদীর ধার, জলাভ‚মি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই এদের বেশি জন্মাতে দেখা যায়।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com