মো.ফজলে রাব্বি, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা ঃ
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সীমান্ত পথে ভ্রমণ পিপাসু ও চিকিৎসা সেবা নিতে ভারতগামী পাসপোর্টধারী যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। করোনা মহামারিতে দু’বছর বন্ধ থাকার পর ভ্রমণ ভিসা চালু হওয়ায় স্থলবন্দর দিয়ে পারাপার হচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। তবে আখাউড়া ইমিগ্রেশন সহজে পার হলেও সীমান্তের ওপারে ভারতের আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে দুর্ভোগে পড়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভারতে যাওয়া যাত্রীদের।
২০২০ সালের ১১ই মার্চ থেকে করোনা মহামারির ফলে ভারত সরকার ভ্রমন ভিসা বন্ধ করে দেয়। চলতি বছরের এপ্রিলের দিকে তা আবার চালু করে সেদেশের সরকার।
জানাগেছে, প্রতিদিন আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে প্রায় ১ থেকে দেড় হাজার যাত্রী ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করেন। এই যাত্রী সংখ্যার বিপরীতে বর্তমান আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবনটি একেবারেই ছোট এবং জরাজীর্ণ। বারবার সংস্কার করে কোনো রকমে টিকে আছে ভবনটি। টানা বৃষ্টি হলে হাঁটুপানি জমে ইমিগ্রেশন ভবনের সামনে। তখন যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বর্তমান ভবনটিতে যাত্রীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত বসার জায়গা এবং টয়লেট ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা।
অপর দিকে আখাউড়া ইমিগ্রেশনে নির্মাণাধীন নতুন ভবনের কাজ ভারতীয় বিএসএফের বাঁধার মুখে গত সাড়ে ৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে জনাকীর্ণ পুরাতন ভবনে এবং খোলা আকাশের নিচে প্রচন্ড রোদ কিংবা বৃষ্টির মধ্যেও যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
চট্রগ্রাম থেকে আসা ভারতগামী যাত্রী বিমল ঘোষ(৫৫) জানান, সকাল ১০ টায় এসেছি এখনো ১১টায়ও লাইনেই আছি। এত গরমের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ বোধ করছি। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুতিক পাখা বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রীয় এসি না থাকার কারণে ইমিগ্রেশন ভিতর পছন্ড গরমে তাপদাহ সৃষ্টি হয়েছে।
ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন সুনিল কুমার(৪৫) নামের এক যাত্রী তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি মাঝে মাঝে এই পথ দিয়ে আসা যাওয়া করি, এই পথের সব থেকে বড় যেই সমস্যা সেটা হচ্ছে আমাদেরকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সিএনজি চালকদের মাধ্যমে, তারা একটা চক্র করে রাখছে, অতিরিক্ত ভাড়া চেয়ে বসে। বিষয়টি এখানকার স্থানীয় প্রশাসনের নজর দেয়ার জন্য দাবী করেন।
জয়নাল নামের আরেক যাত্রী বলেন, আমাদের বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই চলে যেতে পারি কিন্তু ভারতের আগরতলা ইমিগ্রেশনে বিএসএফের চার দফা তল্লাশি ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ব্যাগেজ তল্লাশি, ইমিগ্রেশনের সার্ভার জটিলতা, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং ইন্টারনেটে ধীরগতিসহ কড়া নজরদারির ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। তাদের এই ধীরগতির কারণে প্রায় সময় যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আখাউড়া-আগরতলা চেকপোস্টে যাত্রী পরিষেবা বাড়ানো এবং যাত্রী এই হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এ পথে চলাচলকারী পাসপোর্টধারী যাত্রীরা।
আখাউড়া কাস্টমস সূত্রে জানাগেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৯৭ হাজার ৩২৮ জন যাত্রী। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৫২২ জন যাত্রী। এ অর্থ বছরে যাত্রীদেরকাছ থেকে ভ্রমনকর হিসেবে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ কোটি ২৭ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা।
২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশে এসেছেন ৬ হাজার ৪৪ জন যাত্রী। বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ৪ হাজার ৬০৯ জন যাত্রী। ভ্রমনকর হিসেবে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩ লক্ষ ৪ হাজার ৫শ টাকা।
গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে আখাউড়া দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৪৮ হাজার ৯৯৪ জন যাত্রী। আর ভারতে গেছেন ৫৬ হাজার ৪৬৫ জন যাত্রী। এ বছরেও যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্রমনকর হিসেবে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ কোটি ৮২ লক্ষ ৩২ হাজার ৫শ টাকা।
আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, প্রতিদিন ভ্রমণ ও চিকিৎসা ভিসা নিয়ে প্রায় ১ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করছে। পছন্ড যাত্রী চাপ থাকার কারনে কাজ করতে অনেক সময় বেগ পেতে হয়। ইমিগ্রেশন রুমটি ছোট হওয়ায় যাত্রীদের চাপে রুমটি প্রচুর গরম হয়ে উঠে। এছাড়াও বিদ্যুতের লোডশেডিং ও সার্ভারের মাঝেমধ্যে জটিলতার দেখা দেয়। এতে করে যাত্রীদের সেবা দিতে গিয়ে আমাদেরও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমরা যাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা দিতে বিরতিহীন ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি নির্মাণাধীন ইমিগ্রেশনে নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে কোন সমস্যা থাকবেনা।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com