আশুগঞ্জে পিডিবির জায়গায় প্রভাবশালীর ভবন নির্মাণ

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে  বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধিগ্রহণকৃত জায়গায় প্রভাবশালীরা করছেন বহুতল ভবন নির্মাণ। শুধু তাই নয়, তারা একাত্তরের শহীদ পরিবারের ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গাও দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।এসব বিষয়ে ইউএনও’র কাছে পিডিবি’র লিখিত অভিযোগ, আদালতে মামলাও চলমান। এই নিয়ে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আশুগঞ্জের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে জায়গাটি বেদখল অবস্থা থেকে রক্ষা ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার অনুরোধ জানান। অন্যদিকে দখলকৃত জায়গা উদ্ধারে ভুক্তভোগীদের পক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে দায়ের হয়েছে মামলা। তবে  প্রভাবশালী মহলটি নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
পিডিবি কর্তৃপক্ষ গত ২৯ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রদত্ত অভিযোগপত্রে বলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ১১.৩৪ একর ভূমির মধ্যে চারলেন সড়ক প্রকল্পের জন্য সমঝোতার ভিত্তিতে ২.৭৩ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। সিএস ও এসএ খতিয়ানে ভূমির পরিমাণ সঠিক থাকলেও বিএস খতিয়ানে চার শতক ভূমি অন্তর্ভূক্ত হয়নি। কিন্তু পিডিবি’র এই জায়গায় নাহার গার্ডেন মালিক পক্ষ স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় সরকারি ভূমি বেদখল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে উপজেলার সোনারামপুর গ্রামের মৃত এলাই বকসের পুত্র জসিম উদ্দিন ও আব্দুল খালেক এবং মৃত আব্দুল আলীম ওরফে আলেকের পুত্র রুবেল মিয়া ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা প্রভাবশালীদের দখল চেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা করেন। বাদী জসিম উদ্দিন ও আব্দুল খালেকের ভাই আবুল হোসেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। মামলার মূল বিবাদীরা হলেন সোনারামপুরের মৃত আজাদ মিয়ার পুত্র রিপন মিয়া ও রুবেল মিয়া, মৃত আজাদ মিয়ার স্ত্রী নাহার বেগম, যাত্রাপুরের মৃত সামছুল হকের পুত্র শামীম মিয়া, সোহেল মিয়া ও বড়তল্লা গ্রামের আ. আজিজের পুত্র কুতুবুর রহমান ।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, শহীদ আবুল হোসেনের পিতা এলাই বকস (মৃত ফজর আলী ফকিরের ছেলে) সোনারামপুর মৌজার ৩০৬ দাগের ২৮ শতক ভূমি ১৯৪৯ সালের ২৪ ডিসেম্ব কিনেন। এর মধ্যে পিডিবি ০৪ শতক অধিগ্রহণ করেন এবং তিনি ০১ শতক বিক্রি করে দেন। বাকি ২৩ শতকের মধ্যে ১৬ শতক বিএস খতিয়ানভুক্ত। একই এলাকার আজাদ মিয়া ১৯৮৭ সালের ১৪ জানুয়ারি উল্লেখিত দাগের ৪২ শতক জমি কিনেন। পরবর্তীতে ওই জমির ২৫ শতাংশ বিক্রি করলেও বিএস খতিয়ানে আজাদ মিয়ার নামে ৬০ শতাংশ ভূমি লিপিবদ্ধ হয়। আমমোক্তার নিয়োগ হওয়া আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘নিরীহদের জায়গা দখলের পাঁয়তারা হচ্ছে বলে আমি মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছি।’ মামলার বাদী আবদুল খালেক বলেন, ‘প্রতিপক্ষ রিপন মিয়া গং আমাদের জায়গা জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে।’ অপরদিকে মামলার বিবাদী কামরুজ্জামান রিপন বলেন, আমি অন্যের জায়গা দখল করতে যাবো কেন? উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ফোন করে আমাকে সোমবার দেখা করতে বলেছে।’
আশুগঞ্জ পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘জায়গাটি আমাদের অধিগ্রহণকৃত। আমাদের জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় দখলমুক্ত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।’