প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ২৫, ২০২৫, ১:১৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ২৪, ২০২৫, ৮:০৭ অপরাহ্ণ

মনোয়ার হোসেন রতন।।
ইরান—তোমার নাম উচ্চারণ করলেই ইতিহাস উঠে দাঁড়ায় সালাম জানাতে। তুমি কেবল একটি রাষ্ট্র নও, তুমি এক জাগ্রত চেতনার নাম, নবীপ্রেমিক জাতির প্রেরণা, যেখানে শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না—বরং প্রতিটি ফোঁটা থেকে জন্ম নেয় ঈমানের কুঁড়ি, জাগে প্রতিরোধের চেতনা।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব শুধু রাজনৈতিক পালাবদল ছিল না, ছিল এক আত্মঘোষিত প্রতিজ্ঞা—“জুলুমের সামনে মাথা নত নয়, বরং রক্ত দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা।” ইমাম খোমেনি ছিলেন সেই নেতা, যিনি কারবালার আত্মত্যাগকে রাজনীতির কেন্দ্রে এনে দাঁড় করালেন। তাঁর নিঃশব্দ কণ্ঠে কেঁপে উঠল শাহর সিংহাসন, টলোমলো হলো সাম্রাজ্যবাদী দম্ভ।
এই বিপ্লব শুধু ইতিহাসের পৃষ্ঠা নয়—এটি একটি চলমান বার্তা: “ইসলাম নিছক ইবাদত নয়, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা।” এই বার্তার অনুবাদ আমরা দেখতে পাই কাসেম সোলাইমানির জীবন ও শাহাদাতে। নিঃশব্দ, নম্র কিন্তু বজ্রকঠিন এই কমান্ডার ছিলেন আধুনিক যুগের প্রতিরোধের প্রতীক। তাঁর রক্ত ছড়িয়ে পড়েছে গাজার অলিতে, বায়তুল মুকাদ্দাসের গলিতে, লেবাননের পাহাড়ে, ইয়েমেনের মরুভূমিতে, ইরাকের পথে—এক মহামিলনের প্রতিরোধে।
ইরান কেবল পুরুষ প্রতিরোধ যোদ্ধার জন্ম দেয় না, জন্ম দেয় সেইসব নারীর—যারা ফাতিমা, জয়নাব ও রুকাইয়ার উত্তরসূরি। তারা হিজাবের সম্মান রক্ষা করে, একহাতে সন্তানকে যুদ্ধে পাঠায়, অন্যহাতে তসবিহ ঘুরিয়ে বলে: “হে আল্লাহ, আমার সন্তানকে কবুল করো।” এই নারীরা আধুনিক ‘ফেমিনিজম’-এর ভ্রান্তিকে চ্যালেঞ্জ জানায় ঈমান, আত্মত্যাগ ও মর্যাদার ভাষায়।
ইসলামের ইতিহাসে যাদের নামে আমরা কাঁপতাম—খালিদ ইবনে ওয়ালিদ, সালাহউদ্দিন আইয়ুবি, তারিক বিন জিয়াদ—তাদের উত্তরসূরি আজকের হিজবুল্লাহ, আল-কুদস ফোর্স ও হামাস। তারা শুধু অস্ত্রের জবাব দেয় না, তারা দেয় কুরআনের আয়াতে জ্বালাময়ী প্রত্যুত্তর। তাদের পাথরও কথা বলে, তাদের রক্তও লিখে যায় প্রতিরোধের কাব্য।
ফিলিস্তিন যেন আজকের কারবালা। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়ানো শিশুর চোখে আমরা দেখি জ্বলন্ত প্রতিজ্ঞা—মৃত্যুভয় নয়, বরং শাহাদাতের স্বপ্ন। তাদের আজান থামে না, তাদের ঈমান দমে না। শহীদের মা, সন্তান হারিয়েও মুখে উচ্চারণ করেন: “এই কুরবানি কবুল করো হে প্রভু।”
বিশ্বব্যাপী যখন মুসলিম নেতারা মৌনতা ও সুবিধাবাদে নিমগ্ন, তখন ইরান দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করে সাহসের বাণী:
“প্রতিরোধ প্রতিহিংসা নয়—এটি ঈমানের দাবি।”“শত্রুকে পরাজিত করতে হলে আগে নিজেকে জয় করতে হবে।”
ইরান আজ যেন বদরের প্রান্তর—অস্ত্র কম, অথচ তাকওয়ার জোরে অজেয়। যখন রাজপ্রাসাদের বিলাসে ঢেকে ফেলা হচ্ছে কাবার রূহ, তখন ইরানের রাস্তায়, ফিলিস্তিনের গলিতে, ইয়েমেনের পাহাড়ে বেজে চলে একটি ঐশী সুর:“সত্যের পতাকা কখনো নামানো যায় না, শহীদের রক্তই তাকে উঁচু রাখে।”
ইরান ও ফিলিস্তিন—তারা আজ আমাদের জন্য একটি আয়না। এই আয়নায় আমরা দেখতে পাই মুসলিম উম্মাহর সম্ভাব্য মুক্তির দিগন্ত, দেখতে পাই রাসূলের ভালোবাসা, শহীদের আত্মত্যাগ আর মজলুমের কান্না।
এ কারণেই আমি তোমাকে বলছি
—নো কম্প্রোমাইজ, নো সারেন্ডার। তুমি আমাদের কবিতার অন্তরা, ইতিহাসের আলোকবর্তিকা। তুমি সেই সুর, যেটি বলে:“সত্য যখন রক্তে স্নাত হয়, তখনই জন্ম নেয় এক বিপ্লবের সূর্য।”