প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ৬, ২০২৫, ১১:৪১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ৬, ২০২৫, ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ

মনোয়ার হোসেন রতন।।
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশ দেখেছিল ইতিহাসের এক উজ্জ্বল দৃশ্য—ছাত্র-জনতা দল-মত-ধর্ম-বর্ণ ভুলে এক হয়ে দাঁড়িয়েছিল অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে। সেই মুহূর্তে জাতি জেগেছিল, রাজপথ কাঁপিয়ে উঠেছিল “ইউনিটি অব অ্যাকশন” এর গর্জনে। স্বপ্ন দেখা গিয়েছিল—এ একতাই একদিন গড়ে তুলবে নতুন বাংলাদেশ।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই চেতনাকে আর খুঁজে পাই না দেশের নেতৃত্বে। রাজনীতির অঙ্গনে দেখি না কোনো সম্মিলিত উদ্যোগ, নেই সেই দেশপ্রেমিক ঐক্য। চারদিকে শুধু বিভাজন, দোষারোপ আর স্বার্থের কষাঘাত।
আমরা খুঁজি, ডাকি, প্রতীক্ষায় থাকি—“কোথায় সেই একতা?”কোথায় সেই দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব, যারা জাতিকে নিয়ে যাবে আলোর পথে?
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আজ যেন একে অপরের প্রতিপক্ষ, জাতির সেবক নয়। দেশ গঠনের স্বপ্ন তাদের কাছে মুখে উচ্চারিত কিছু শব্দ মাত্র, বাস্তবে তা হারিয়ে যায় পদ-পদবি আর ক্ষমতার হিসাব-নিকাশে। ছাত্রদের মতো ঐক্য আর দৃঢ়তা তাদের মধ্যে নেই—থাকলেও সেটা ক্ষণস্থায়ী, কৌশলগত, লোক দেখানো।
আমরা ছুটে যাই নানা দিকে—ডানে, বামে, সামনে, পেছনে। চারদিকে খুঁজি সেই নেতৃত্ব, যারা জাতির সামনে জ্বালাবে আলোর মশাল। কিন্তু কোথাও দেখি না সেই দৃপ্ত কণ্ঠ, যে বলবে—“এ দেশ আমাদের, আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলব।”
আজ দেশের রাজনীতি যেন ছায়ার রাজত্ব। প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়ালেও তার ভিতর নেই অন্তরের সত্যতা। আছে শুধু ফাঁকা বুলি, যার নিচে চাপা পড়ে থাকে মানুষের স্বপ্ন, তরুণদের আশা, দেশের ভবিষ্যৎ।
জাতি যখন ছাত্র-জনতার ঐক্যে আশাবাদী, তখন রাজনৈতিক নেতৃত্বে এ ব্যর্থতা যেন জাতীয় হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেন তারা পারে না একসাথে বসে দেশের কথা ভাবতে? কেন তারা ভুলে যায় যে, জাতির কল্যাণই তাদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব?
দেশপ্রেম কেবল স্লোগানে নয়, প্রমাণ হয় কাজে। আর সেই কাজের জন্য চাই সাহস, ত্যাগ, এবং সর্বোপরি ঐক্য। আজ যখন পুরো জাতি তরুণদের মধ্যে নতুন সম্ভাবনা খুঁজছে, তখন তাদের সামনে রাজনীতিকদের বিভাজনের মুখচ্ছবি কতটা বেদনাদায়ক!
আমরা কি সেই জাতি, যারা বিপ্লব করতে জানি, কিন্তু পুনর্গঠন করতে পারি না?
আমরা কি শুধু রাস্তায় নামি, কিন্তু পথ দেখাতে পারি না?
যদি সত্যিই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে এখনই দরকার নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি—যেখানে মতভেদ থাকবে, কিন্তু লক্ষ্য হবে একটাই: “বাংলাদেশ”।
ছাত্র-জনতার যে জাগরণ, তা হোক রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রেরণা। শিক্ষা গ্রহণ করুক তারা—যে একসাথে চলা মানেই শক্তি, আর বিভাজন মানেই পতন।
এটা ঠিক, প্রতিটি বিপ্লব এক সময় ম্লান হয়, যদি তার উত্তরাধিকার না তৈরি হয়। যদি সেই স্পৃহা আর চেতনা রাজনীতির কেন্দ্রে প্রবেশ না করে, তাহলে আবারও আমরা হারিয়ে যাবো দিকশূন্য এক বিভ্রান্তিতে।
তাই সময় এসেছে প্রশ্ন করার:
“একতা কোথায়?”এ প্রশ্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিটি নেতার সামনে রাখা উচিত।
এ প্রশ্ন রাখা উচিত আমাদের নিজেদের কাছেও—আমরা কি কেবল দর্শক হয়ে থাকবো, নাকি ঐক্যের দাবিতে, উন্নয়নের দাবিতে আমরা নিজেরাই দাঁড়াবো সম্মিলিতভাবে?
যে দেশ ছাত্র-জনতার একতার শক্তিতে জেগে উঠতে পারে, সে দেশ নিশ্চয়ই রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিবেকেও আলো জ্বালাতে পারে—শর্ত শুধু একটাই, সবাইকে একযোগে দেশকে ভালোবাসতে হবে, কাজ করতে হবে দেশকে নিয়ে—শুধু নিজের দল, পদ বা ক্ষমতার জন্য না।
আজ যদি আমরা এক না হই, কাল হয়তো খুব দেরি হয়ে যাবে।