প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ৩, ২০২৪, ১১:৩৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১৯, ২০২৩, ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ
মাহফুজ নান্টু।
পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে একটা দেশকে স্বাধীন করা। আবার সেই স্বাধীনতা রক্ষা করতে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বলিদান। বিশ্বাস ঘাতকের বুলেটে রক্তাক্ত হওয়ার মত এমন কঠিন নির্মোহ সত্য ঘটনার প্রতিফলন দেখে আমাদের হৃদয় কেঁপে উঠলো।
বুধবার কুমিল্লা জেলা পুলিশের উদ্যােগে শিল্পকলা একাডেমিতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত 'মুজিব একটি জাতির রূপকার' শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী শেষে এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করেন দর্শনার্থীরা।
দর্শনার্থী জোনায়েদ মোস্তফা বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছেন। বাবা যুদ্ধের সময় তিনি দেশ ছেড়ে যান নি। আমি বাবার মুখে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনা শুনেছি। তবে মুজিব দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। এত হৃদয়বিদারক ঘটনা। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন চোখে পানি চলে আসে।
গৃহিনী সুরাইয়া বেগম বলেন, যারা মুজিব দেখবেন তাদের চোখে ভিজে আসবে। আমরা শিল্পকলা একাডেমির আলো আধারীর মাঝে কেঁদেছি। এতটাই সত্য, এতটাই কঠিন সব দৃশ্য।
কুমিল্লা জেলা পুলিশের উদ্যােগে শিল্পকলা একাডেমিতে 'মুজিব: একটি জাতির রূপকার' শীর্ষক চলচ্চিত্রটির সকাল সাড়ে ১০ টায়, বিকেল ৩ টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় মোট তিনটি শো প্রদর্শিত হয়। এই তিনটি শো'য়ে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় হয়।
সন্ধ্যায় প্রদর্শিত শো'য়ে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোঃ হেলাল উদ্দিন, জেলা প্রশাসক খন্দকার মু: মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নানসহ কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিকগণ, সাংস্কৃতিক কর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ সহ জেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর প্রথম ২টি শো'তে কুমিল্লা মহানগরীর ১০টি স্কুল, মাদ্রাসার দুই সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী সহ নানা শ্রেণি পেশার প্রায় তিন হাজারেরও বেশি দর্শক চলচ্চিত্রটি উপভোগ করেন। এ সময় তাদের আবেগ ও উচ্ছাস ছিলো চোখে পড়ার মতো।
এই বায়োপিকে টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া শিশু খোকার বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠা, পাঁচ দশকে একটি দেশ ও জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দেওয়া, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অসামান্য ত্যাগ, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ধাপে ধাপে গড়ে ওঠা এবং বঙ্গবন্ধু যেভাবে হিমালয়সম ব্যক্তিত্বে পরিণত হন সেটাকে খুব সফলভাবে ধারণ করতে পেরেছে।
চলচ্চিত্রটি উপভোগ করে শিক্ষার্থীরা বলেন 'দাদা-দাদি ও মা-বাবার কাছে লেখাপড়ার অবসরে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। সেসব গল্পের সাথে এই সিনেমাটির অনেক মিল খুঁজে পেলাম। আমাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে একটি বাস্তব ধারনা সৃষ্টি হয়েছে। যা আমাদের আগামী দিনে খুবই উপকারে আসবে।"
বিখ্যাত পরিচালক শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত এই ছবিটি সকল বয়সী দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে। উপস্থিত দর্শকদের অনেকেই উচ্ছ্বসিত হয়েছেন, আবেগপ্রবণ হয়েছেন।
চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজক কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, ' বঙ্গবন্ধু আমাদের আইডল, আমাদের অবিনাশী চেতনার বাতিঘর। সকল দর্শক বিশেষত নতুন প্রজন্ম যেন বঙ্গবন্ধুর অসীম দেশপ্রেম, আত্নত্যাগ, সাহসিকতা ও ন্যায্যতা উপলব্ধি করতে পারে সে জন্যেই জেলা পুলিশের এই' উদ্যোগ।
কুমিল্লার অনেকেই ছবিটির মাধ্যমে অনেক অজানা ইতিহাস জেনেছেন মর্মে মতামত দিয়েছেন। চলচ্চিত্রটি সকলেরই দেখা উচিত বলে জানিয়েছেন। দেশের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস সকলকে জানার সুযোগ করে দেয়ার এই অনন্য উদ্যোগ নেয়ার জন্যে জেলা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন প্রদর্শনীতে আগত দর্শকবৃন্দ।
জেলা পুলিশের আয়োজনে এই চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানটি আজ বৃহস্পতিবারও চলবে।