উদ্বেগ, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বার্তা
মনোয়ার হোসেন রতন।।
গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে এক ঐতিহাসিক ও সাংবিধানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেলা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় এই অঞ্চলের প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ গুরুত্ব পায়। আর সেই গোপালগঞ্জই এখন আবারও রাজনীতির উত্তাপ ছুঁয়ে যাচ্ছে এনসিপি (ন্যাশনাল সিভিল পার্টি)-এর "পদযাত্রা কর্মসূচি"কে কেন্দ্র করে।
দলের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে আয়োজিত এই পদযাত্রা কর্মসূচি প্রথমে একটি শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক প্রতিবাদ হিসেবেই ঘোষিত হয়েছিল। কিন্তু আজ, ১৬ জুলাই ২০২৫, সকাল থেকেই গোপালগঞ্জ শহরের পরিবেশ নাটকীয়ভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দলীয় সূত্র ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, শহরের প্রবেশপথে পুলিশের একটি গাড়িতে হঠাৎ হামলার ঘটনা ঘটে—যা পুরো পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলে এবং কর্মসূচিকে ঘিরে জোরালো উত্তেজনার সৃষ্টি করে।
এনসিপির পদযাত্রার মূল দাবি তিনটি বিষয়কে ঘিরে:
দলটির পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, এই পদযাত্রা শান্তিপূর্ণ এবং সাংবিধানিকভাবে জনগণের কাছে তাদের অবস্থান তুলে ধরার মাধ্যম। তবে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি ভিন্ন বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে।
সকাল থেকেই গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সক্রিয় টহল, রাস্তার চেকপোস্ট এবং আগত গাড়িগুলোর তল্লাশি চালানো হয়। স্থানীয় সূত্র মতে, এমন কঠোরতা দীর্ঘদিন পর দেখা গেল।
হামলার ঘটনার পরপরই পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। শহরের কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করা হয়। যদিও এনসিপির দাবি, তাদের কোনো কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। বরং তারা এটিকে একটি “প্রত্যক্ষ পরিকল্পনার অংশ” হিসেবে উল্লেখ করেছে, যার মাধ্যমে আন্দোলন দমন ও জনমত দমন করা হচ্ছে।
সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া এই পরিস্থিতিতে দ্বিধান্বিত ও মিশ্র। একপক্ষ মনে করে, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা হওয়া প্রয়োজন, অন্যপক্ষ মনে করে, এই ধরনের কর্মসূচি জনজীবনে অস্থিরতা ও শঙ্কা সৃষ্টি করছে।
ব্যবসায়ী মহল ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী বলেন, “পথে যেতে ভয় লাগে, কখন কী হয় বোঝা যায় না।” শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট দুপুরের আগেই বন্ধ হয়ে যায়, যা অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গোপালগঞ্জে এনসিপির মতো একটি নবীন রাজনৈতিক শক্তির এমন পদচারণা সরকার ও প্রশাসনের জন্য নতুন করে ভাবনার কারণ হয়ে উঠেছে। তারা বলছেন, এই কর্মসূচি যদি সত্যিকার অর্থে সহিংসতামুক্ত থেকে গণমানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে, তবে এটি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হয়ে উঠতে পারে।
গোপালগঞ্জের রাজনৈতিক মাটি, যা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাকেন্দ্রিক ইতিহাসের ধারক, আজ আবার এক নতুন উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে। এনসিপির দাবি ও পুলিশের অবস্থানের দ্বন্দ্ব এখন শুধুই একটি কর্মসূচির বাস্তবতা নয়, বরং এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক সংবেদনশীল অধ্যায়ের ইঙ্গিত।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com