কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার যেভাবে কেঁচো সার বিক্রেতা!

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
আইটি সেক্টর। ভালো বেতনে চাকরি। গায়ে ব্লেজার,গলায় টাই, পায়ে পালিশ করা জুতা। ৯টা-৫টার বাঁধা-ধরা জীবন তাকে হাঁফিয়ে তোলে। শেষ দিকে একটি নামি এনজিও’র আইটি সেকশনে কাজ করেন। ওদের কেঁচো সারের উদ্যোগ তার নজরে পড়ে। তিনি জানতে পারেন-মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ ৫ভাগ থাকতে হয়। দেশের অনেক জায়গায় তা ২ভাগেরও কম। এজন্য প্রয়োজন মাটিতে জৈব সার প্রয়োগ। এছাড়া এ সারের চাহিদা রয়েছে। মনোযোগ দিয়ে করলে ভালো আয়ও সম্ভব। সে ভাবনা থেকে গ্রামে ফিরে আসেন। তার বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার পিহর গ্রামে। তার ভাবনার কথা স্ত্রীকে জানান। স্ত্রী কৃষি ডিপ্লোমা করা। তিনি তার উদ্যোগে সমর্থন দেন। স্ত্রীর অনুমতি পেলেও প্রতিবেশী এবং গ্রামের লোকজন সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে। জামা-জুতা পরে মাস শেষে বাড়ি আসা ছেলেটা অন্য বেশ নিয়েছে। টয়লেটে ব্যবহার করা রিং সংগ্রহ করেছে। গোবর মাটি সংগ্রহ করছে। তার মধ্যে ছাড়ছে কেঁচো। মেধাবী ছেলেটার মাথা মনে হয় গেছে। এই ভাবে শুরুটা করেন তরুণ সাইফুল ইসলাম। ১৬টি রিং দিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন করা শুরু করেন। এখন রিংয়ের সংখ্যা ২০০টি। এখন প্রতি মাসে তার সার উৎপাদন হয় ৭টনের মতো। কেজিবিক্রি করেন ১৫টাকা দরে। মাসে আয় লাখ টাকার উপরে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও বাইরের জেলা থেকেও ক্রেতারা সার নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ক্রেতার চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না।
পিহর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে একটি লম্বা টিনের চালার ঘর। ঘরের গায়ে ব্যানারে লেখা- প্লান পাওয়ার কেঁচো সার। ঘরের ভিতরে রিংয়ের সারি। রিংয়ে মাটি ও কেঁচো দেয়া। সার সংগ্রহ। চালুনি,ওজনের পর বস্তায় নেয়ার কাজ চলছে। সহাকারীদের সাথে ব্যস্ত উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলামও। নতুন অনেকে সেখানে প্রবেশ করে কেঁচো দেখলে হয়তো গা- ঘিন ঘিন করে উঠবে। কিন্তু তারা হাসিমুখে কাজ করে যাচ্ছেন।


সাইফুল ইসলাম মজা করে বলেন, ২০২১সালে শুরু করি। স্ত্রী কৃষি লাইনে লেখাপড়া করায় সহযোগিতা পেয়েছি। নতুবা কেঁচোর চাষাবাদের কথা শুনে ঘর থেকে তাড়াতেন!
তিনি বলেন, এই কাজ তাকে আনন্দ দেয়। কারণ তিনি মাটির প্রাণ ফিরিয়ে দিতে জৈব সার তৈরি করছেন। এছাড়া এটা তার পরিবারের আয়েরও উৎস। মানুষ নিরাপদ ফসল চাইছে। যখন শুরু করি-তখন এলাকার অনেকে বলে এটা পাগলামী। কিন্তু আমার বিশ^াস ছিলো তাই সফলতা পেয়েছি। ধৈর্য্য নিয়ে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই। কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, সাইফুল ইসলাম কঁচো সার উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমরা তাকে প্রদর্শনীর মাধ্যমে সহযোগিতা করি। আমাদের প্রচারণায় কেঁচো সারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
তিনি আরো বলেন,অনেক সময় কৃষকরা বলেন-রাসায়নিক সার দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। তখন তাদের বলি-জৈব সার প্রয়োগ করতে। মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে জৈব সার প্রয়োগের বিকল্প নেই।


উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুল হক রোমেল বলেন, মাটির ১৬টি উপাদানের ১২টি জৈব সারে পাওয়া যায়। রাসায়নিক সারে আলাদা উপাদান রয়েছে। তবে জৈব সারে নাইট্রোজেন,ফসফরাস ও পটাশিয়ামসহ বিভিন্ন উপদান একসাথে রয়েছে। মাটি বাঁচাতে এই সারের বিকল্প নেই। উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম কেঁচো সারের মাধ্যমে সচ্ছলতা পেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি কৃষকদের এই সার উৎপাদনে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছেন।