আবু সুফিয়ান রাসেল।।
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজা ধর্মমাণিক্যের নিজ হাতে গড়া ধর্ম সাগর দিঘি। তবে এটি নিছক কোনো দিঘি বা সাগর নয় এটি হচ্ছে একটি ইতিহাস। যাতে রয়েছে আবহমান কালের নানা নিদর্শন। বিশেষ করে খনন হওয়ার পর থেকেই কখনো না শুকানো, বিরল প্রজাতির মৎস্য সম্পদ ও হিমেল হাওয়াসহ নানা বৈশিষ্ট্যে নিজস্ব সত্ত্বা ধরে রেখেছে এটি।
গোড়াপত্তন থেকেই ধর্ম সাগরের অবয়ব যা ছিলো, এর কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন হয়নি। তবে সময়ের ব্যবধানে এর চারদিকে সৌন্দর্য্য বর্ধন করা হয়েছে । এতে দর্শনার্থীদের কাছে হয়ে উঠেছে আরও আকর্ষনীয়। বিশেষ করে পশ্চিম পাড়ে বসার জন্য নির্মিত স্থায়ী বেঞ্চের নতুন রূপ, আলোকসজ্জা, রঙ-বেরঙের ব্যতিক্রমী টাইলসের রাস্তা, অবৈধ দোকান পাট উচ্ছেদসহ সময়োপযোগী কয়েকটি পদক্ষেপের কারণে নতুন ছন্দে ফিরে এসেছে প্রাণের ধর্ম সাগর পাড়। তাই সেখানের নান্দনিক চিত্র ও মনলোভা সৌন্দর্যের ছোঁয়া নিতে দিনে দিনে বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। বিশেষ করে প্রাতঃভ্রমণে নির্মল পরিবেশে শারীরিক অনুশীলন, দুপুরে সাগর ঘেষা দেয়ালে বসে তরুণ তরুণীদের আড্ডা ও বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সর্বশ্রেণির মানুষের গমগম আওয়াজে মুখর থাকে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী ধর্ম সাগর অঙ্গন।
এছাড়াও এর সৌন্দর্য্যকে আরও ঢেলে সাজাতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নেয়া নানা পদক্ষেপ এর অবয়বকে আরও নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষন সৃষ্টি করেছে চারু শিল্পী জুনায়েদ মোস্তফার মোজাইক আর্ট। এতে রয়েছে বোটাসহ সিরামিক ডিজাইনের চোখ ধাঁধানো বেঞ্চি । এসব শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হচ্ছে সর্ব শ্রেণির মানুষ। অন্যদিকে এর প্রবেশ দ্বারে স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ আয়না। যাতে ক্লান্ত ও অবসাদে দর্শনার্থীরা নিজেদের চেহারাকে পরিপাটি করে নিতে পারে। এসব কারণে ধর্মসাগরের প্রতি দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে। এমনিতেই সেখানে সর্বশ্রেণির মানুষের আনাগোনা থাকে। তবে সাপ্তাহিক ছুটি ও বিশেষ দিনগুলোতে এর মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
নগরীর বাসিন্দা ও নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণকারী সাংবাদিক খাইরুল আহসান মানিক বলেন, সাম্প্রতিককালে ধর্মসাগর পাড়ের অনেক উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে এ ধর্মসাগর পাড়। এর পশ্চিম পাড়টি কাঁচা একটি সরু পথ ছিল। পরে আধা পাকা, তারও পরে পুরো অংশ পাকা করা হয়। সময়ের সাথে সাথে এটি আরও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। যা নগরবাসীকে খুবই বিমোহিত করে। তাছাড়াও অবৈধ দোকান পাট উচ্ছেদ করা হয়েছে, যা একটি ভালো উদ্যোগ।
নারী দর্শনার্থী তামান্না আক্তার মুক্তা বলেন, শহরের কোলাহল থেকে একটু খানি স্বস্তির নিশ্বাস নিতে সময় পেলেই ছুটে আসি ধর্মসাগরের পানে। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
এক নজরে ধর্ম সাগর
আয়তন: ২৩.১৮ একর
খননকারী: মহারাজা ধর্মমাণিক্য
খনন সাল: ১৪৫৮
খননের উদ্দেশ্য: এতদঞ্চলের মানুষের জলের কষ্ট নিবারণ করা
মূল ইতিহাস গ্রন্থ: রাজমালা
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বললেন, কুমিল্লার প্রাণ ধর্মসাগর। এর রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য। নগরবাসীর সহযোগিতায় এর উন্নয়ন করতে পেরেছি। ইতোমধ্যে কিছু শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ফটক তৈরি, লাইটিং ও সম্পূর্ণ টাইলস করা হয়েছে। আমাদের আরও পরিকল্পনা রয়েছে।
অবস্থান: ধর্মসাগরের উত্তর রাণীর কুঠির ও পৌরপার্ক, দক্ষিণে মহিলা মহাবিদ্যালয়, পূর্বে কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং স্টেডিয়াম আর পশ্চিম রয়েছে অতীন্দ্র মোহন রায় সড়ক।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com