কুবিতে নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হলের ভবনে ফাটল

 

কুবি প্রতিনিধি।।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে(কুবি) নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হলের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। দেয়ালে হাত দিতেই খসে পড়ছে পলেস্তারা, ছাদ বেয়ে পড়ছে পানি। তাছাড়া দেড় বছরের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি ৫ বছরেও। কাজ শেষ হওয়ার আগেই এমন ফাটলে প্রশ্ন উঠেছে নির্মাণ সামগ্রীর মান নিয়ে। এদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ছাত্রীদের জন্য শেখ হাসিনা হল নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহবান করার পর প্রকল্পটির কাজ পায় আবদুর রাজ্জাক জেবিসিএ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের জন্য সংশোধিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৯৭ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। প্রকল্প চুক্তিতে ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৫৯ মাস অতিবাহিত হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। বারবার সময় বাড়িয়েও পাঁচ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার অনুমতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময়ের মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভূক্ত করে রিটেন্ডার আহ্বান করে নতুন কাউকে কাজ দেয়া হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। তবে ওই সময়ের প্রায় দেড় মাস পেরুনোর পর কাজ শেষ না হলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

নির্মাণাধীন হলটি ঘুরে দেখা যায়, ভবনের ২য় এবং ৩য় তলার অধিকাংশ কক্ষেই ফাটল দেখা দিয়েছে। এর ফলে ছাদ থেকে পানি বেয়ে ভেসে যাচ্ছে কক্ষ। ফাটল দেখা দেওয়া বিভিন্ন অংশে চুন ও পলেস্তারা দিয়ে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও সেখানেও দেখা দিচ্ছে ফাটল। তাছাড়া, এখনো হলের ফটক, গার্ড-রুম এবং রাস্তা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ, টয়লেট, লকার ও টাইলসের কাজসহ অনেক কাজই বাকি রয়েছে। অল্প কয়েকটি জানালায় স্বচ্ছ থাই কাঁচ লাগানো হয়েছে। রাস্তার পাশে হল হওয়ার পরও স্বচ্ছ কাঁচ লাগানোয় বাইর থেকে দেখা যায় হলের ভিতরের অংশ। এতে প্রশ্ন উঠেছে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এবং অদক্ষ জনবল আর স্বল্প পরিমাণে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কারণেই প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির তদারকির দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘টুকটাক এ ধরনের সমস্যা থাকতে পারে। ফিনিশিং করার সময় এ ধরনের কাজ গুলোই করতে হয়। আমরা এখন এগুলো করছি।’

 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মেয়াদে সময় বৃদ্ধি করলেও কাজের যথাযথ অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজ করা হলে আমাদের ইঞ্জিনিয়ার দপ্তরের মাধ্যমে তদারকি করবো এবং ফাটলের ব্যাপারে পরবর্তী বিল দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি দেখবো।

 

উল্লেখ্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই হাজারের বেশি ছাত্রীর বিপরীতে আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ৩০৩ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থীই আবাসন সংকটের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আবাসন সংকটের কারণে বেশিরভাগ ছাত্রীই বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।