কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতির অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মানববন্ধন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ। সোমবার (৫ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে সাংবাদিক সমিতির আয়োজনে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন তারা। এসময় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক সংগঠন ডিবেটিং সোসাইটি, রক্তদাতা সংগঠন বন্ধু, ছায়া জাতিসংঘ সংস্থা, অনুপ্রাস কণ্ঠ চর্চা কেন্দ্র,প্লাটফর্ম, রোভার স্কাউটস, প্রথম আলো বন্ধুসভা, অভয়ারণ্য, তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, লিও ক্লাব কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, আইটি সোসাইটি, সাইন্স ক্লাবসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেহ ইউসুফ আকাশের সঞ্চালনায় নেতৃবৃন্দ বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্পণ হয়ে কাজ করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের কাছে তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু একের পর এক সাংবাদিকদের সাথে এমন আচরণ স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি সাংবাদিকরা নিরাপদে চলতে না পারে, এই বিশ্ববিদ্যালয় কতটা অনিরাপদ হয়ে আছে সেটা প্রশাসনের উপলব্ধি করা উচিত। যারা ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে রাখছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা উচিত।
এ সময় অভয়ারণ্য'র সভাপতি আবদুল্লাহ আল সিফাত বলেন, ফ্রিডম অফ প্রেসের উপর এই ধরনের হামলা সত্যি ন্যাক্কারজনক। যারাই এই অপরাধের সাথে জড়িত সে যেই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যেন বিচার হয় সেটা আমি প্রত্যাশা করি। আমরা কখনও আশা করি নাই এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটতে পারে। সেটা যে কোন ধরনের সংগঠনের সাথে হতে পারতো। এই ধরনের ঘটনা না যেন আর না ঘটে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই দাবি জানাচ্ছি।
রক্তদাতা সংগঠন বন্ধুর সভাপতি আব্দুল্লাহিল মারুফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরিবার। সংগঠন সমূহ ভ্রাতৃতুল্য। সংগঠন সমূহ সবসময় সুসম্পর্কের পরিচয় দিয়েছে।
সাংবাদিক সমিতি অফিস নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। যেটি সকল সংগঠনের জন্য হুমকি স্বরূপ। আমরা সাংবাদিক সমিতির আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে এ ঘঠনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি৷
দৈনিক ইত্তেফাকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, গত ২৯ তারিখের পর থেকে বিভিন্নভাবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি সদস্যদের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা৷ তাদের এই হুমকি-ধামকির বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে অফিস ভাঙচুর। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য।
মানববন্ধনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মাহি বলেন, গত ২৯ তারিখের ঘটনার পর থেকে ছাত্রলীগের একটি অংশ প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল৷ সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ। আগের ঘটনার পর প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ হয়নি। পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হত না। আমরা প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টা সময় দিয়ে বলতে চাই। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। অন্যথায় দেশের সাংবাদিক সমাজকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হব।
প্রসঙ্গত, এর আগে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে গত ২৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধি রুদ্র ইকবালকে হেনস্তা করেন ছাত্রলীগের সাবেক এবং বর্তমান নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রেজা-ই -এলাহী দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন 'গুণ্ডামির কি দেখেছে? সাংবাদিকরা এখনও আমাকে চিনে না, আমি কে?' ’এই ক্যাম্পাস কারো বাপের না’।
ঘটনার জেরে রবিবার (৪ জুন) রাতে সাংবাদিক সমিতির অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাবেক নেতা রেজা ই এলাহী সমর্থিত মাহি হাসনাইন, মমিন শুভ, নুর উদ্দিন হোসাইন, স্বজন বরণ বিশ্বাস, আমিরুল বিশ্বাস, সাদ্দাম হোসাইন, আব্দুল্লাহ আল কাফি, দ্বীপ চৌধুরী, নুর মোহাম্মদ, রাকেশ দাস, রাশেদ ইবনে নূর, রিয়া দাশ, সেলিম রেজা, এস কে মাসুম, রাকিব হোসাইনসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরা কর্মরত সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এসময় এসকে মাসুম নামে একজনকে বলতে দেখা যায়, 'সাংবাদিকদের এখন থেকে সরাসরি একশন হবে।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা মামলার জন্য কথা বলেছি। দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।