অফিস রিপোর্টার।।
ইঁদুর। যা ক্ষতিকর প্রাণী হিসেবে পরিচিত। বছরে দেশের প্রায় ৩হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট করে। ইঁদুর নিধনের জন্য সরকার প্রতি বছর ডাক ঢোল বাজিয়ে পুরস্কার দেয়। বাসা বাড়িতে বসানো হয় ফাঁদ,দেয়া হয় বিষটোপ। কিন্তু কুমিল্লায় ইঁদুর না মেরে উল্টো যতœ সহাকারে পালন করা হচ্ছে! অনেকটা ব্রয়লার মুরগির মতো ট্রাংকে রেখে জামাই আদরে চাল গম খাওয়ানো হচ্ছে। তবে সাধারণ ইঁদুর নয়। এগুলো সুইজারল্যান্ডের সুইস অ্যালবিনো প্রজাতির সাদা ইঁদুর। কুমিল্লা নগরীর সালমানপুরে এই খামার গড়ে তোলা হয়েছে। খামারের উদ্যোক্তা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুবি) ফার্মেসি বিভাগের ল্যাব সহকারী মো.আবদুল আউয়াল ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অফিস সহকারী নাসির উদ্দিন। তারা দুইটি ইঁদুর দিয়ে শুরু করেন। বর্তমানে এর সংখ্যা ১০০০এর বেশি। চাকরির পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে ইঁদুর চাষে বাড়তি আয় হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের আশা বিদেশেও এই ইঁদুর রপ্তানি করতে পারবেন।
সূত্র জানা যায়,২০২২সালের অক্টোবর মাসে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অফিস সহকারী নাসির উদ্দিনের বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন সালমানপুরের বাড়িতে গড়ে তোলা হয় ইঁদুরের ফার্ম। নাম ‘কুমিল্লা মাইচ ফার্ম’। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের গবেষণার প্রয়োজন মিটিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও তারা বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করেন। দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ল্যাবে এই ইঁদুর সরবরাহ করা হয়। ফার্মে ৩০-৩৫ গ্রামের ইঁদুর পাওয়া যায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অফিস সহকারী নাসির উদ্দিনের সালমানপুরের বাড়ি। মূল ঘরের পাশে আরেকটি ছোট ঘর। সেখানে র্যাকে সাজানো ট্রাংক। ট্রাংকের ওপরে তারের নেট। ভেতরে সাদা ইঁদুরের বসবাস। নাসির কোন ট্রাংকে খাবার দিচ্ছেন, কোনটির ময়লা পরিষ্কার করছেন।
আবদুল আউয়াল বলেন, আমি একজন ল্যাব সহকারী, প্রয়োজনীয় ইঁদুর নিয়ে আসতে হতো অন্য জায়গা থেকে। এগুলোর পরিচর্যা করতে গিয়ে প্রজনন প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য বিষয়গুলো জানতে পারি। তাই নিজেরা ইঁদুর উৎপাদনের চেষ্টা করি। চারটি স্তরে মোট পাঁচশত ইঁদুর বিক্রি করতে পেরেছি। প্রয়োজন অনুসারে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে আমরা নিয়মিত সরবরাহ করছি। আমরা দুজন চাকরির পাশাপাশি এখানে সময় দেই।
নাসির উদ্দিন বলেন, আবদুল আউয়াল ভাইয়ের ল্যাবে ইঁদুর লাগে। দূর থেকে আনা কষ্টসাধ্য ও ব্যয় বহুল। তিনি আমার সাথে পরামর্শ করেন। আমার বাড়িতে খামারটি চালু করি। দুইজন ভোর থেকে এগুলোর পরিচর্যায় লেগে যাই। পরিচ্ছন্ন করি। খাবার দেই। তারপর অফিসে যাই। বিক্রি বাড়লে আমাদের আরো বেশি মুনাফা হবে। এখানের ইঁদুর বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ফার্মেসি বিভাগের বিভিন্ন কোর্সের অংশ হিসেবে ইঁদুর নিয়ে গবেষণা করতে হয়। কোনো একটি মেডিসিন তৈরি করা এবং এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে ইঁদুর ব্যবহার করা হয়। ল্যাবে আগে ইঁদুর ছিল না, অন্যান্য ল্যাব থেকে নিয়ে আসতে হতো। এতে ইঁদুর মারা যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। এখন ক্যাম্পাসের পাশে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এএফএম আবদুল মঈন বলেন, কুমিল্লায় ইঁদুরের খামার হওয়ায় ফার্মেসি বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের গবেষণা সহজলভ্য হচ্ছে। এটি অবশ্যই ভালো একটি উদ্যোগ, এমন উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। তাদের দেখে স্থানীয় লোকজনও ব্যতিক্রম উদ্যোক্তা হওয়ার উৎসাহ পাবেন।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com