মহিউদ্দিন মোল্লা।।
কুমিল্লা নগরীতে প্রায় শত বছর পর বেজে উঠলো হারিয়ে যাওয়া কলের গান (গ্রামোফোন)। কুমিল্লা শহরতলীর শাসনগাছা এলাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ে এই কলের গানের সন্ধান মেলে। তেল মবিল আর বিদ্যুত ছাড়া চলে এই কলের গান। এটি দেখতে উৎসকদের আগ্রহ দেখা গেছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের স্টোর রুমে এই কলের গান পাওয়া যায়। সেটি কয়েকদিন আগে কয়েকজন স্টাফের নজরে আসে। তারা কলের গানটি বের করে সেটি বাজানোর চেষ্টা করেন। এই সময় পরিত্যক্ত যন্ত্রটি বেজে উঠলো তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। গুন পোকায় খাওয়া বাক্সের ভেতরে কলের গানটি। তবে ভেতরের যন্ত্রটি নতুনের মতো। ধুলা মুছে একজন স্টাফ রেকর্ড লাগিয়ে হাতল ঘুরিয়ে যন্ত্রে দম দেন। একটু পরে সেখানে বেজে উঠে আব্বাস উদ্দিনের গাওয়া-আমরা দিন কি এমনি যাবে বইয়া? এছাড়া শিয়রে শাশুড়ি ঘুমায়সহ নানা গান। এখানে কলের গানের সাথে রয়েছে ৫০টির বেশি রেকর্ড।
১৯৮০সালে এই অফিসে যোগ দেন সাবেক স্টেনোগ্রাফার আবদুল হক। তিনি ২০১৫সালে অবসরে যান। তিনি বলেন, এই অফিসটি বৃটিশ আমলে করা। সে সময় এটির অধীনে ছিলো চট্টগ্রাম ও সিলেট এলাকাও। অফিসটি ছিলো চট্টগ্রামে আঞ্চলিক অফিস। সিলেট এলাকায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কিছু ক্লাব ঘর করা হতো। সেখানে গান ও কৃষি বার্তা প্রচারে কলের গান বাজানো হতো। সেখান থেকে এটি আসতে পারে।
তিনি আরো বলেন,এই কলের গানটি আমিও দেখেছি। আমার সাবেক দায়িত্বশীল থেকে এটি বুঝে পেয়েছি। আমরা তখন আলপিন দিয়ে এটি বাজিয়ে দেখেছি।
অফিসের প্রধান সহকারী তৌহিদুর রহমান বলেন, সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো। আমরা স্টোর রুমে কাজ করছিলাম। এটি দেখে পরীক্ষা করছিলাম। দেখি বাজছে। কোন তেল বিদ্যুত ছাড়াই চলে। একশ‘ বছরের প্রাচীন জিনিস বাজতে দেখে অভিভূত হলাম। সে সময় জিনিস গুলো ভালো বলে এখনও টিকে আছে। একটু সংস্কার করলে আশা করি এটি নতুনের মতো হয়ে যাবে।
ঐতিহ্য গবেষক নাজমুল আবেদীন বলেন, বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে কুমিল্লার বিভিন্ন বাসায় কলের গান বাজতো। একজনের বাড়িরটা শুনতে ১০বাড়ির মানুষ আসতেন। ৭০দশকের পর এটি হারিয়ে গেছে। কৃষি অফিসে পাওয়া কলের গানটি সংস্কার করা উচিত। এতে নতুন প্রজন্ম তার ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।
ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন,১৯শতকের প্রথম দিকে কুমিল্লা ছিলো সুরের শহর। এই শহর উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ,আয়াত আলী খাঁ,ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু,শচীন দেব বর্মণের শহর। এই শহরে এক সময় প্রায় প্রতিটি বনেদী পরিবারে গ্রামোফোন ছিলো। কৃষি অফিসে পাওয়া গ্রামোফোনটিও সেই সংস্কৃতির অংশ হতে পারে। এটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com