কুমিল্লার ফুটপাতে মজাদার সি-ফুডের পসরা

তরুণী চৈতীর জীবন সংগ্রামের গল্প
মহিউদ্দিন মোল্লা॥
নিউমার্কেট। কুমিল্লা নগরীর ব্যস্ততম এলাকা। নিউ মার্কেট সড়কের পূর্ব পাশের শেষ মাথায় শিক্ষা অফিস কমপ্লেক্স। কমপ্লেক্সের গেইটের পাশে ছোট একটি খাবারের গাড়ি বা ফুড কার্ট। বিকাল নামতেই এর পাশে ক্রেতাদের ভিড় জমে। এখানে বিক্রি হয় সমুদ্রের মাছ থেকে তৈরি নানা রকম মজাদার খাবার। একজন তরুণী খাবার তৈরি করছেন। তাকে সাহায্য করছেন একজন কিশোর। মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করেন তার সহপাঠিরাও। ফুড কার্টের পাশে গেলে নাকে লাগে মাছ ভাজার মিষ্টি গন্ধ। ফুড কার্টের নাম সামথিং ফিশি। উদ্যোক্তার নাম চৈতী কর্মকার। তিনি নগরীতে সড়কের পাশে সি-ফুড বিক্রি করা একমাত্র তরুণী। তার ফুড কার্টে কাঁকড়া মাসালা, লইট্টা ফ্রাই, রুপচাঁদা ফ্রাই, স্কুইড মাসালা ফ্রাই,অক্টোপাস মাসালা ফ্রাই পাওয়া যায়। এছাড়া চিকেন টিক্কা বার্গার, চিকেন পাকোড়াও পাওয়া যায়।


চৈতী কর্মকার বলেন,বাবার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তিনি স্বর্ণ ব্যবসা করতেন। শৈশবে বাবাকে হারিয়েছেন। মামার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পাঁচগাছিয়া গ্রামে। সেখানে বড় হয়েছেন। একাদশ শ্রেণীতে পড়েছেন কুমিল্লা কমার্স কলেজে। ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হন ঢাকার একটি কলেজে। সেটা সম্পন্ন করতে পারেননি। একটি ছোট সরকারি চাকরি হয়। মায়ের আপত্তিতে দূরে যেতে পারেননি। কুমিল্লা শহরে এসে রানীর দিঘির পাড়ের বাসায় মা ও নানীকে নিয়ে থাকেন। কিছু করার ইচ্ছে থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর একটি কোর্স করেন। মাঝে এক বছর হোটেল রিজেন্সিতে কাজ করেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে চিন্তা করেন কুমিল্লায় খাবারের দোকান দিবেন। কিন্তু এত পুঁজি তো নেই। তাই চিন্তা করেন- সড়কের ধারে ছোট করে কিছু করার। শেষে মা ও নিজের গহনা বন্ধক দিয়ে নেমে পড়েন। কুমিল্লায় ফুটপাতে মুরগি দিয়ে তৈরি খাবারের অনেক দোকান আছে। ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা। সেই থেকে সি-ফুড নিয়ে কাজ করা।

চট্টগ্রাম জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ সংগ্রহ করেন। পরিবার প্রথমে ইতিবাচক ছিলোনা। তবে তারা সব সময় সহযোগিতা করেছে। বাসায় মাছ প্রক্রিয়াজাতে মা ও নানী সহযোগিতা করেন। তার কিছু বন্ধু আছে। তারা একেক দিন একেকজন সহযোগিতা করে। প্রথম দিকে তত সাড়া পাননি। এখন সি-ফুডের চাহিদা বাড়ছে। খাবারের মান রক্ষায় তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন বলে জানান। তার ইচ্ছে রয়েছে নগরীতে বড় পরিসরে একটি সি-ফুডের রেস্টুরেন্ট দিতে।
বৃক্ষপ্রেমী মোজাম্মেল আলম বলেন,কুমিল্লা যাত্রিক নাট্যগোষ্ঠীর নাট্যকর্মী চৈতী কর্মকার। জীবন যুদ্ধের একজন সাহসী তরুণী সে। বিভিন্ন স্বাদের সি-ফুডের ব্যবসা করছেন। তার খাদ্যের মান কোন তারকা খচিত রেস্টুরেন্টের চেয়েও কম নয়। তার ব্যবহারও চমৎকার। তার হাত ধরে কুমিল্লা নগরীতে বড় পরিসরে একটি সী-ফুডের রেস্টুরেন্ট দেখতে চাই।
কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবীর মাসউদ বলেন,শিক্ষার বড় মেসেজ হচ্ছে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়া। চৈতীর সেই উদ্যোম রয়েছে। আমরা তার সফলতা কামনা করি।