কুমিল্লার মাদক যেভাবে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকায়

অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লার সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলা চৌদ্দগ্রাম,সদর দক্ষিণ, আদর্শ সদর,বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া। সীমান্ত দিয়ে আসা মাদক কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ১০৫ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে ঢাকা,নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়,বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সীমান্তের মাদক সব সময় উপজেলা সড়ক হয়ে মহাসড়কে আসেনা। কখনও গ্রামের সড়ক গুলো ব্যবহার করা হয়। সেগুলো কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে নাজিরা বাজার দিয়ে মহাসড়কে আসে। চৌদ্দগ্রামের মাদক মিয়া বাজার,কালিকাপুর, হাড়ি সর্দার, পৌর এলাকার হাউজ বিল্ডিং,বাতিসা, আমজাদের বাজার,চিওড়া রাস্তার মাথা হয়ে মহাসড়কে আসে। এছাড়া সদর দক্ষিণের সুয়াগাজী,চৌয়ারা, পদুয়ার বাজার ও আদর্শ সদরের আলেরখার চর হয়ে মহাসড়কে আসে। কখনও গোমতী নদীর পাড়ের সড়কও ব্যবহার করা হয়।
বুড়িচংয়ের নিমসার,চান্দিনার বাস টার্মিনাল, এছাড়া দাউদকান্দিও গৌরিপুর ও ঈদগাহ এলাকায় মাদক নামে।
সবচেয়ে নিরাপদ রুট বলে জানা গেছে, মহাসড়কের দাউদকান্দির বারপাড়া থেকে গোয়ালমারী, চাঁদপুর উত্তর মতলবের কালির বাজার হয়ে নারায়ণগঞ্জ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের অন্তত ২০ শতাংশ মাদক সরবরাহ করা হয় কুমিল্লা জেলা দিয়ে। মাদক জব্দ ও মামলায় টানা ১২মাস প্রথম স্থানে রয়েছে কুমিল্লা জেলা। এছাড়া কুমিল্লায় মাদক নিয়ে হত্যাকা- প্রায়ই ঘটছে। গত দুই বছরে মাদক ব্যবসা, মাদক ব্যবসা নিয়ে আধিপত্য বিস্তার, মাদক পাচার, মাদক সেবনের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া, মাদকের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে জেলায় পঞ্চাশের অধিক হত্যাকা- হয়েছে। উল্লেখযোগ্যের মধ্যে রয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশেনের ১৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেল, তিতাসের যুবলীগ নেতা জামাল, কুমিল্লা সদরের আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল, পুলিশের সোর্স নাঈম হত্যাকা-।
উপজেলা প্রশাসন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কুমিল্লার আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অন্তত ১০০ কিলোমিটার এলাকা ভারত সীমান্তবর্তী। মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে যেসব মাদকদ্রব্য জব্দ হয়, তার মধ্যে ইয়াবার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১০৫ কিলোমিটার অতিবাহিত হয়েছে কুমিল্লা দিয়ে। কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক, কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়ক, দীর্ঘ রেললাইন ও নৌপথ অতিবাহিত হয়েছে কুমিল্লার ওপর দিয়ে। যে কারণে সারাদেশের সাথে যোগাযোগের একটি শক্ত নেটওয়ার্ক আছে কুমিল্লার। কুমিল্লায় তৈরি ও প্রবেশ করা মাদক তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ গলে চলে যায় সারাদেশে।
অপর একটি সূত্রে জানা যায়, মাদকের চালান ধরা ও মামলা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা ও মাদক নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত সকল বাহিনীর একটি সুনির্দিষ্ট টার্গেট থাকে। মাসিক টার্গেট পূরণ করার পর মাদকের চালান ধরতে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এছাড়া কিছু অংশ মাদক ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধায় ছাড় দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা-১০ বিজিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেশি সংখ্যক মাদক জব্দ হওয়া বা কুমিল্লা মাদক জব্দে টানা ১২ মাস প্রথম হওয়ার মানে হলো বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনী মাদক নিয়ন্ত্রণে ভালোভাবে কাজ করছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসান জানান, মাদকের বিস্তার তুলনামূলক বেড়েছে। আমরা মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আশফাক হোসেন জানান, কুমিল্লার সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলার স্কুল-কলেজগুলোতে মাদক বিরোধী ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছি। মহাসড়ক ও সীমান্তবর্তী এলাকায় জোরালোভাবে কাজ করা হচ্ছে। কুমিল্লায় মাদক নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বারবার মাদক পাচারের রুট বদল করছে। সমাজের নাগরিকরা সচেতন না হলে কুমিল্লা থেকে মাদক পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হবে না।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো.খাইরুল আলম বলেন,হাইওয়েতে মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জোরালো ভাবে কাজ করছি। আজও(মঙ্গলবার) বিপুল মাদক আটক করেছি। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।