মাসুদ আলম।।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ১৫দিনে ভর্তি করোনার সাতশ’ রোগী। করোনায় আক্রান্তের মধ্যে এই সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ১০জনের,উপসর্গে মারা গেছেন ৩১জন। করোনাভাইরাসে কুমিল্লা জেলায় প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা। সেই সঙ্গে বাড়ছে নতুন করে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যাও। এরই মধ্যে ভাইরাসটিতে কুমিল্লায় দুই হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে শতাধিক মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কোন তালিকায় না থাকলেও আক্রান্তে মৃত্যু তালিকা ৬০ এর কোটায় পৌঁছেছে।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সূত্রমতে, কুমিল্লায় গত ১৬ জুন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫৯জন ব্যক্তি মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ১২৬ জন। তার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫০৬ জন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
সংক্রমিত হয়ে পড়া রোগীদের সেবায় গত ৩জুন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫৫ শয্যার করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ১০ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ)।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাজেদা খাতুন জানান, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ৩ জুন থেকে বুধবার পর্যন্ত সাতশত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১০জন। এছাড়া লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে মারা গেছেন ৩১ জন। সর্বশেষ গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৪ জন করোনা শনাক্ত রোগী। গুরুতর অবস্থায় করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন আরও ৪০ জন। বর্তমানে ১৭ জুন পর্যন্ত কুমিল্লায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে সাপোর্টে আছেন ১০জন।
সহকারী পরিচালক ডা. সাজেদা খাতুন আরও জানান, আইসিইউ’র সাপোর্ট প্রয়োজন এমন গুরুতর রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। রোগীর তুলনায় আইসিইউ বেডের সংকট। সেই সাথে জনবল সংকটও রয়েছে। কারণ শুধু কুমিল্লা জেলার করোনা রোগীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। এখানে সেবা নিতে আসছেন বৃহত্তর কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুরে আক্রান্ত রোগীরাও।
উল্লেখ্য গত সোমবার (১৫ জুন) তাৎক্ষণিক আইসিইউ সুবিধা না পাওয়ায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর রোগীর স্বজনেরা হাসপাতালের দরজা-জানালা ভাঙচুর ও অক্সিজেনের লাইন ছিঁড়ে হুলুস্থুল কা- বাধায়। পরে হাসপাতালের অন্য রোগীর স্বজনেরা তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো. মুজিবুর রহমান বলেন, মারপিট করা লোকদের বাবা মারা যাওয়ায় মানবিক কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি।
এদিকে কুমিল্লায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংবাদ প্রতিদিনই আসছে। সর্বশেষ গত একসপ্তাহে ১৮ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
করোনা লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো.শাহাদাত হোসেন জানান, কুমিল্লায় সিভিল সার্জন অফিস করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে ব্যক্তিদের কোন তালিকা নেই। কারণ সাধারণ রোগে বা স্বাভাবিক অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদেরও করোনার লক্ষণ থাকে। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করার পর করা হয়েছে এমন তথ্য সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পাওয়া যেতে পারে।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com