কুমিল্লায় নিজের গাছ কেটে ২১ দিন ধরে হাজত খাটছেন তিন ব্যক্তি!

 

অফিস রিপোর্টার।।

নিজ মালিকানাধীন জমিতে নিজের লাগানো গাছ কেটে সাজা ভোগের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরে এ ঘটনা ঘটে। নিজের গাছ কেটে ২১ দিন ধরে হাজত খাটছেন আবু সাইদ নামে এক প্রবাস ফেরৎ ব্যাক্তি। তিনি একাই নন, সাথে তার ছোট ভাই মাওলানা আবুল খায়ের ওরফে মুজিবুর এবং ওই গ্রামেরই প্রয়াত আবদুর রৌফের ছেলে রাশেদ মিয়াসহ তিনজন! ঘটনাটি জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাংগরাবাজার থানাধীন রাজাবাড়ি গ্রামে। আবু সাইদ ও মাওলানা আবুল খায়ের ওই গ্রামের প্রয়াত আবদুল হামিদের (হামদু মিয়া) ছেলে। রবিবার ঘটনাটি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।

আবু সাইদের স্ত্রী রত্না বেগম বলেন, নিজের ভূমি থেকে গাছ কাটার পরও আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পরিকল্পিত ভাবে হাজত খাটানো হচ্ছে। মাওলানা আবুল খায়েরের স্ত্রী সালামা বেগম বলেন, আমার স্বামী দাউদকান্দিতে একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। ওই দিন বাড়িতেই ছিলেন না। তিনি সেদিন তার কর্মস্থলেই ছিলেন। প্রতিবেশী আবু ইউসুফ আবন ষড়যন্ত্র করে এই মামলা দিয়েছেন। রাশেদ মিয়ার বড় ভাই মাসুদ রানা বলেন, আমার ভাই রাশেদ একটি ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে কর্মরত। সেদিন সে তার কর্মস্থলে ছিলো। তাকেও এই মিথ্যা অভিযোগে জড়িয়ে বিনা অপরাধে হাজত খাটানো হচ্ছে।

সরেজমিন খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, আবু সাইদ ও তার ছোট ভাই মাওলানা আবুল খায়ের ২০০৯ সালে তার চাচা আবদুল কাদির বেপারীর ছেলেদের কাছ থেকে ৮০৪ খতিয়ানভূক্ত ৩২৩৩ দাগে দুই শতক করে মোট চার শতক ভূমি কেনেন। দীর্ঘ ২৯ বছর প্রবাসজীবন শেষে চলতি বছরের শুরুতে দেশে আসেন আবু সাইদ। তিনি অবসর সময়টি বসে না থেকে দোকানটি চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর দোকান ঘরটির চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেন এবং এখানে তাদেরই লাগানো কাঠের গাছগুলো ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা গাছগুলো পরে নেয়ার লক্ষে কেটে ফেলে রেখে যান। এই সুযোগে প্রতিবেশী আবু ইউসুফ আবন এই গাছ তার উল্লেখ করে গোপনে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গত ০১ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিচারক তাদের তিনজনকে জামিন না মঞ্জুর করে জেলা হাজতে পাঠান।

উক্ত মামলায় বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট এএইচএম আবাদ এবং এডভোকেট আবদুল কাইয়ুম চিশতী জানান, বর্তমানে মামলাটি জামিন শুনানির জন্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রয়েছে।

আবু সাইদের স্ত্রী রত্না বেগম এবং আবুল খায়ের এর স্ত্রী সালমা বেগম জানান, বাড়িতে পুরুষ না থাকায় আবু ইউসুফ আবনের মামাতো ভাই কামালসহ অন্যান্যরা প্রতিনিয়তই এসে তাদের বাড়িতে হুমকি দিচ্ছে। এতে তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এনিয়ে তারাও পৃথক ভাবে থানা ও আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

আবু ইউসুফ আবন বলেন, আমি জায়গার মালিক। কে কিনেছে কে বিক্রি করেছে জানি না। গাছ কাটায় মামলা দিয়েছি। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে। এদিকে তাদের পরিবারকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয় বলেও তিনি জানান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাংগরাবাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর শাহনেওয়াজ বলেন, আমি আদালতের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সাক্ষ্য প্রমাণাদি নিয়ে দেখা গেছে উল্লেখিত ভূমিতে আবু সাইদ ও আবুল খায়েরের দখল বিদ্যমান। এমতাবস্থায় উভয় পক্ষকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে নোটিশ দিয়েছি। এমর্মে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছি।