কুমিল্লায় সিনেমা স্টাইলে গুলি ও কুপিয়ে যুবলীগ কর্মী হত্যা

আমোদ ডেস্ক।।

কুমিল্লায় দিনের বেলায় সড়কের পাশে সিনেমা স্টাইলে হেলমেট পরিহিত দুর্বৃত্তরা গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে কুমিল্লা নগরীর ২৫ নং ওয়ার্ডের যুবলীগের কর্মী জিল্লুর রহমান চৌধুরী ওরফে গোলাম জিলানীকে। বুধবার সকাল ৭টার দিকে নগরীর চৌয়ারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে যুবলীগের কর্মী খুনের ঘটনায় নগরীজুড়ে চলছে নানা আলোচনা।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকাল ৭ টার সময় জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা গ্রাম থেকে স্ত্রীকে পাশের তারাপাইয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতে বাড়ির অদূরে আসেন গোলাম জিলানী। এ সময় চৌয়ারা পুরাতন সড়কে অস্ত্রধারী সাতটি মোটর সাইকেল আরোহী ১৪জন তাকে ঘিরে ধরে। প্রথমে তার পায়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ জিল্লুর মাটিতে পড়ে গেলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, একই রকম পোষাক ও মাথায় হেলমেট পরিহিত একদল মোটর সাইকেল আরোহী রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা গোলাম জিলানীকে প্রথমে গুলি করে। তখন গোলাম জিলানী মাটিতে পড়ে যায়। দুর্বৃত্তদের সাথে একটি বস্তায় অনেকগুলি রামদা ছিলো। পরে গুলিবিদ্ধ গোলাম জিলানী মাটিতে পড়ে গেলে তাকে রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে। একটি কোপ গোলাম জিলানীর কোমর ও পেটে পড়ে। এ সময় জিল্লুর হামলাকারীদের অনুরোধ করেন তাকে না কোপানোর জন্য। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পরে তার স্ত্রী নগরীর মনোহরপুর বাসা থেকে ওই স্থানে আসেন। স্ত্রী এসে দেখেন স্বামী মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় স্ত্রীর জাহানারা আক্তার স্থানীয়দের সহযোগিতায় গোলাম জিলানীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সকাল ৯টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জিলানী।

স্থানীয়রা জানান, গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২৫নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশ নেন গোলাম জিলানী।

নিহতের ভাই অহিদুর রহমান জানান, গরু বাজার দখল ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: আবুল হাসান ও তার ভাই হোসেনসহ অন্যরা এ হত্যাকাÐ ঘটিয়েছে। বেশ কিছুদিন যাবত গোলাম জিলানীর সাথে ২৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসানের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

নিহতের মা ৮০ বছরের ফেরদৌসী বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, তার চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে গোলাম জিলানী ৩য়। গোলাম জিলানী সকালে তার বৌকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গেলে কাউন্সিলর মো: আবুল হাসান ও তার সঙ্গীরা ছেলেকে হত্যা করে।ছেলেটা আমারে কবরও দিতে পারলো না। এই কাউন্সিলর হাসান আমার বাসায় কত ভাত খাইছে। সে কিভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করে! আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই বলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন তিনি।
স্ত্রী জাহানারা আক্তার ভয়ে কোন কথা বলছেন না। তিনি শুধু বলেন, আমার নিজের সামনে স্বামীকে হারিয়েছি। তাদের নাম বললে আমি ও সন্তানদেরও মেরে ফেলবে।
নিহত যুবলীগ কর্মী জিলানীর তিন ছেলে। বড় ছেলে রায়হান চৌধুরী। সে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র । মেঝো ছেলে রোদেয়ান চৌধুরী একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। ছোট ছেলে রাফসান চৌধুরী। তার বয়স পাঁচ বছর।
বাবাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বড় ছেলে রায়হান চৌধুরী। একটু স্বাভাবিক হয়ে বলেন, রাজনীতির কারণে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
এদিকে অভিযুক্ত মো. আবুল হাসানের বক্তব্য নিতে চেষ্টা করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পুলিশ, পিবিআই ও র‌্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা আলামত উদ্ধারের চেষ্টা করেন। নিহতের স্ত্রী সন্তান ও মায়ের সাথে কথা বলেন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আজিম-উল-আহসান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা হত্যাকাÐের সাথে জড়িতদের আটক করতে কাজ করছি। তবে এ ঘটনায় এখনো পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা দায়ের হয়নি।