গত ২০২০-২০২১ অর্থবছর এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তিন মাসে কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (সিইপিজেড) থেকে রপ্তানি হয়েছে ৭৫১ দশমিক শূন্য সাত মিলিয়ন ডলারের পণ্য। যা বাংলাদেশি টাকায় ৬হাজার ৩৮৩ কোটি ৫০লাখ। এর মধ্যে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৫৬৫ দশমিক আট পাঁচ মিলিয়ন ডলার ও ২১-২২ অর্থবছরের তিন মাসে হয় ১৮৫.২২ মিলিয়ন ডলার। কুমিল্লা ইপিজেড কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ-এ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩১দশমিক শূন্য ছয় মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে কুমিল্লা ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলো। রপ্তানি হয় ৪৯০ দশমিক সাত ছয় মিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৮ দশমিক চার তিন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়, রপ্তানি হয় ৪৬৪দশমিক চার শূন্য ডলারের পণ্য। তাছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয় ৬১ দশমিক শূন্য দুই এবং এ অর্থবছরের তিন মাসে বিনিয়োগ হয় ১৫ দশমিক আট আট মিলিয়ন ডলার। গত ১৫ মাসে বেশি বিনিয়োগে বেশি রপ্তানি হয়। থমকে থাকা সময়ে রেকর্ড পণ্য রপ্তানি হয় কুমিল্লা ইপিজেড থাকে। এটাকে বিরাট সাফল্য হিসেবে মনে করছেন কুমিল্লা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ। প্রধানত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্র, আমেরিকা, চীন, শ্রীলঙ্কা ও জাপানে রপ্তানি হয় কুমিল্লা ইপিজেডের পণ্য।
সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখা, অনেকগুলো শিফটে লাঞ্চের ব্যবস্থা করা, শ্রমিক-কর্মকর্তাদের কেউ অসুস্থ হলে ১৪দিনের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা ও চাপে থাকলেও উৎপাদন অব্যাহত রাখার কারণে কুমিল্লা ইপিজেডে রপ্তানি বেড়ে যায় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত ২৬৭দশমিক চার ছয় একর ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা ইপিজেড। এখানে প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ৪৮টি। বর্তমানে মোট লোকবলের সংখ্যা ৪০ হাজার ১৮৩জন। শ্রমিক ও কর্মকর্তা মিলিয়ে ৯৯দশমিক চার শূন্য ভাগ লোকবলই বাংলাদেশের। যার মধ্যে প্রায় ৭০ভাগ লোকবল কুমিল্লার। বাকিরা বিদেশি। যেখানে নারী লোকবলের সংখ্যা ৫৯দশমিক আট চার শতাংশ। পুরুষ লোকবলের সংখ্যা ৪০ দশমিক এক ছয় শতাংশ। এদিকে সম্প্রতি আরও দুইটি প্রতিষ্ঠান পাঁচ হাজার শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। এ অর্থবছরে কুমিল্লা ইপিজেডে লোকবলের সংখ্যা ৫০হাজার ছাড়াতে পারে।
এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এ ক্যাটাগরিতে রয়েছে ২৭টি প্রতিষ্ঠান। এ ২৭টি প্রতিষ্ঠান চলছে বিদেশি বিনিয়োগে। তাছাড়া দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান ১৩টি এবং শুধুমাত্র দেশি বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান আটটি।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকবল রয়েছে কাদেনা স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেডে। এখানে লোকবল আছে ছয় হাজার ৯১৫জন। চার হাজার ৬২৮জন লোকবল আছে জিন শ্যাং সুজ (বিডি) লিমিটেডে, চার হাজার ৫৮০জন লোকবল আছে সুরতি টেক্সটাইল লিমিটেডে, চার হাজার ৩১জন লোকবল আছে গোল্ডেন শ্যাং সুজ (বিডি) লিমিটেডে। এগুলোর সবই এ ক্যাটাগরির। রপ্তানিতেও এ তিনটি প্রতিষ্ঠান খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি ব্র্যান্ডিক্স ক্যাজুয়াল ওয়্যার (বিডি) লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটিও এ সময়ে রপ্তানিতে সাফল্য পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে লোকবল আছে দুই হাজার ৬৫৭জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা ইপিজেড থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ওপরের সারিতে আছে তৈরি পোশাক। ইইউভুক্ত রাষ্ট্র ও আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। বিনিয়োগের দিক থেকে এককভাবে সবার ওপরে সারিতে চীন (চীন, হংকং, তাইওয়ান মিলিয়ে) ।
কুমিল্লা ইপিজেডে তৈরি পোশাক, জুতা, ইয়ার্ন, ফেব্রিক্স, টেক্সটাইল ডাইজ ও অক্সিলিয়ারিস, গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ, সোফা কাভার, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, মেডিসিন বক্স, আই প্যাচ, ক্যামেরা ব্যাগ, কম্পিউটার ব্যাগ, হেয়ার অ্যাক্সেসরিজ, স্পোর্টস ওয়্যার ইত্যাদি উৎপাদন হয়ে থাকে।
এদিকে সম্প্রতি কুমিল্লা ইপিজেডের লোকবলদের জন্য একটি হেলথ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেন্টারটিতে সাতজন করে ডাক্তার নার্স সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এখানে আউটডোর সেবা চালু আছে। যা থেকে বিনামূল্যে ডাক্তার ও ওষুধ সেবা এবং নামমাত্র মূল্যে অন্যান্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছেন ইপিজেডের লোকজন।
কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগ, রপ্তানি, স্বাস্থ্যসেবার মান ও লোকবল বাড়লেও গত ২১ বছরেও সম্প্রসারিত হয়নি ইপিজেড অঞ্চল। কর্তৃপক্ষ বলছে, যে পরিমাণ চাহিদা আছে, তার থেকে ২০০ একর জায়গা কম আছে কুমিল্লা ইপিজেডে। বিনিয়োগকারী বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান হুমড়ি খেয়ে পড়লেও তাদের নতুন করে প্লট বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, জায়গা সম্প্রসারিত করে নতুন প্লট বরাদ্দ দেওয়া গেলে নতুন করে ৫০হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে কুমিল্লা ইপিজেডে। যার সুবিধাভোগী হবেন প্রধানত কুমিল্লার নারীরা। কিন্তু কুমিল্লা ইপিজেডকে ঘিরে আশেপাশে একের পর এক বহুতল ভবন করা হচ্ছে। যার কারণে ভবিষ্যতে জায়গা সম্প্রসারণ দুরূহ হয়ে পড়বে বলে মনে করেন ইপিজেড সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে শ্রমিকদের জন্য ভালো আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের শ্রমিক ও স্টাফরা কুমিল্লা ইপিজেডে আসতে চাচ্ছেন না। কুমিল্লায়ও স্থানীয় পর্যায়ে যে ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তা ইপিজেডে কাজ করার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং নিয়োগ দিচ্ছেন। এটা সময় সাপেক্ষ। তাছাড়া ইপজেডের বাইরে কুমিল্লায় বলার মতো তেমন বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। তাই দক্ষ লোকবলের সংকটে ভুগতে হয় কুমিল্লা ইপিজেডকে। দক্ষ লোকবল বাড়ানো গেলে রপ্তানি আরও বাড়তো।
পাশাপাশি, ইপিজেডের পাশের সড়কগুলোতে যানজট ও আলাদা বাহন না থাকায় দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে ইপিজেড সংশ্লিষ্টদের। যানজটের কারণে পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রেও পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়।
এদিকে ইপিজেডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা ইপিজেডের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীর মুখিয়ে আছেন কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগের জন্য। কিন্তু জায়গার অভাবে প্লট বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ইপিজেডের চারদিকে যে পরিবেশ, তাতে ভবিষ্যতে জায়গা বাড়ানো নিয়েও শঙ্কা আছে। জায়গা বাড়িয়ে নতুন নতুন প্লট বরাদ্দ দেওয়া গেলে অনেকের কর্মসংস্থান হতো। রপ্তানি আয়ও বেড়ে যেতো।
আমরা মনে করি, কুমিল্লা ইপিজেডের জায়গা সম্প্রসারিত করে নতুন প্লট বরাদ্দ দেওয়া গেলে নতুন কওে আরও ৫০হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে কুমিল্লা ইপিজেডে। কিন্তু কুমিল্লা ইপিজেডকে ঘিরে আশেপাশে একের পর এক বহুতল ভবন করা হচ্ছে। যার কারণে ভবিষ্যতে জায়গা সম্প্রসারণ দুরূহ হয়ে পড়বে। এবিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com