দেহ জোড়া দেয়াতেই তার যত আনন্দ

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
চিকিৎসক কামরুল ইসলাম মামুন। সম্প্রতি তিনি পায়ের আঙুল এনে হাতে প্রতিস্থাপন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা নগরীতে ইতিবাচক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। সৌদি প্রবাসী গাড়ি চালক আশরাফুল আলমের পায়ের আঙুল এনে হাতে প্রতিস্থাপন করেন। সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলেন তার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল। এরপর থেকেই গাড়ি চালানো অক্ষম হয়ে ফেরেন নিজ বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। বাম পা থেকে আঙ্গুল নিয়ে তা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তার বাম হাতে। কুমিল্লা নগরীর বেসরকারি পিপলস হাসপাতালে এমন অস্ত্রপচার করেছেন চিকিৎসক কামরুল ইসলাম মামুনের নেতৃত্বে তিনজন চিকিৎসকের একটি দল। এরকম তিনি কয়েক শতাধিক অঙ্গ জোড়া লাগানোর কাজ করেন। তার মানুষের দেহ জোড়া লাগানো বিষয়টি অনেকটা গাছের কলমের মতই সফল হচ্ছে। এটি সম্ভবত দেশের প্রথম সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা।
আরেক রোগী কামাল হোসেন। বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে। তিনি করাত কলের শ্রমিক। দুর্ঘটনায় তার ডান হাত কাঠের মতই আলাদা হয়ে যায়। দিনমজুর মানুষ। কোথায় যাবেন,কিভাবে জীবন নির্বাহ করবেন? জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তাকে পেয়ে বসে। খোঁজ পেয়ে কাটা হাত নিয়ে কুমিল্লায় চলে আসেন তিনি। সেই হাত জোড়া লাগিয়ে দেন ডা. মামুন। সেটি আগের মতোই কাজ করছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালে কথা হয় রোগী আশরাফুল আলমের সাথে। তিনি বলেন, তার একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম গাড়ি চালানো। কিন্তু হাতের আঙ্গুল না থাকায় তা তিনি করতে পারছিলেন না। তাই শেষ পর্যন্ত দেশেই চলে আসেন। এখন আঙুল নাড়াতে পারেন। আশা করছেন পুরো সুস্থ হয়ে যাবেন। সুস্থ হলে আবার গাড়ি চালাতে পারবেন।
চিকিৎসক কামরুল ইসলাম মামুন বলেন, আশরাফুল আলমের সাথে পূর্বেই কথা বলে নিয়েছিলেন। ৫০ শতাংশ সফলতার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এতে তিনি রাজি হন। তার বাম পায়ের দ্বিতীয় আঙ্গুল এনে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের স্থানে জোড়া লাগানো হয়েছে। প্রায় সাত ঘন্টার টানা অস্ত্রপচারের পর আমরা সফল হয়েছিলাম। ইতোমধ্যে নার্ভ গুলো সচল হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যার যায় তিনি জানেন অঙ্গ হারানোর কষ্ট। যাদের অঙ্গ কাটা পড়ে তারা যেন সার্জনের সাথে যোগাযোগ করে তার নিকটস্থ হাসপাতালে রোগীকে কাটা অঙ্গসহ দ্রুত নিয়ে আসেন। দুই ঘন্টার মধ্যে আনা গেলে সার্জারিতে ভালো ফলাফল আসে।
সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাউছার হামিদ বলেন, মামুন একজন মেধাবী চিকিৎসক। তিনি আন্তরিকতার সাথে কাজ করায় অঙ্গ জোড়া ও প্রতিস্থাপনের সফলতার হার ানেক বেশি। দুই সপ্তাহ আগে তিনি বিচ্ছিন্ন হওয়া একটি হাত জোড়া লাগিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তিনি পায়ের আঙ্গুলকে হাতে এনে জোড়া লাগিয়েছেন। এটি সম্ভবত দেশের প্রথম সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা। এটি কুমিল্লাসহ সারাদেশের চিকিৎসা সেবায় অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার আলী নূর মোহাম্মদ বশির আহমদ বলেন, ডা. মামুনের নেতৃত্বে জেলা শহরে এত জটিল অস্ত্রপচার চিকিৎসা সেবায় নতুন মাইল ফলক হতে পারে। এতে করেই বিদেশে কয়েক গুণ চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে দেশেই এমন জটিল অস্ত্রপচার করা যাবে।