কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের সাথে ডিজিটাল প্রতারণা
আল-আমিন কিবরিয়া ।।
সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লায়ও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অনলাইন আবেদন চলছে। আবেদন চলাকালে কুমিল্লা নগরীসহ এ জেলার একাধিক উপজেলার বিভিন্ন কলেজ শিক্ষকরা কম্পিউটার দোকানে আসা-যাওয়া চোখে পড়ছে। শিক্ষকদের আসা-যাওয়ার কারণ, কম্পিউটার দোকানিকে ম্যানেজ করা। কিন্তু কেন?
কুমিল্লা নগরীর একাধিক কম্পিউটার দোকানির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা কম্পিউটার দোকানে তাদের কলেজের প্রচার করতে আসেন। শিক্ষকরা কম্পিউটার দোকানিদের জন্য নিয়ে আসেন বিভিন্ন গিফট। আবার অনেক সময় টাকাও দিয়ে যান। এর কারণ কম্পিউটার দোকানি যেন শিক্ষার্থীদেরকে তাদের কলেজে আবেদন করতে বলেন। শিক্ষকদের বলে যাওয়া কলেজে যদি একজন শিক্ষার্থীর আবেদনে করে এবং এ আবেদনের স্ক্রিনশট দোকানদার যদি ওই শিক্ষকদের কাছে পাঠায় তাহলে মোটা অংকের টাকা পান দোকানিরা।
এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও কম্পিউটার দোকানিদের ডিজিটাল প্রতারণার শিকার বহু শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে কারা যেন তাদের একাদশে ভর্তি আবেদন করে দিয়েছে। আবেদন করতে গিয়ে দেখেন আবেদন হয়ে গেছে। এছাড়ও কয়েকটি স্কুল এন্ড কলেজের বিরুদ্বে আভিযোগ উঠেছে শিক্ষার্থীদের কাগজ-পত্র আটকে রেখে একই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে বাধ্য করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কতিপয় কিছু প্রতিষ্ঠান প্রধানরা স্থানীয় কম্পিউটার অপারেটরদের অনৈতিক উপহার ও টাকা-পয়সা দেন। কারণ পছন্দের তালিকায় যেন শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজের নামে আবেদন করে। এছাড়াও চটকদার বিজ্ঞাপন- আমরাই সেরাদের সেরা, ইন্টারনেট সূত্রে- আমরা দ্বিতীয় বলে দাবি করে।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তিতে ১ম পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আবেদনের সময় শেষ হয়েছে চলতি মাসের ১৫ আগস্ট রাত ৮টায়। প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের বুধবার (২০ আগস্ট) ফল প্রকাশ হয়। এ ফল প্রকাশের পরই দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে আবেদন করা যাবে। যাচাই-বাছাই শেষে ভর্তির কাজ হবে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। ক্লাস শুরু হবে ১৫ সেপ্টেম্বর।
কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হুমায়ূন কবীর মাসউদ বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী যেকোন কলেজে ভর্তি আবেদনের স্বাধীনতা ও অধিকার রাখে। কোন প্রতিষ্ঠান ছলে বলে কৌশলে তাদের ভর্তি করানো উচিত নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মফস্বলে যে সকল স্কুল এন্ড কলেজ তাদের পাসকৃত শিক্ষার্থীদের অনেকটা জোর করে মার্কশিট আটকে রাখে অথবা শিক্ষার্থীদের অজান্তেই তাদের অধিকার খর্ব করে তাদের নামেই ভর্তির আবেদন করে রাখে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অনুচিত। এছাড়াও কিছু কলেজ আছে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে অবৈধ যোগসাজশে শিক্ষার্থীদের মোবাইল, এসএসসি রোল, রেজিস্ট্রেশন নম্বর সংগ্রহ করে। অথচ শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের নিকট পবিত্র আমানত। তা বাহিরে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঠিক না।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মোঃ নূরুন্নবী আলম বলেন, আবেদন কারার পর একজন শিক্ষার্থী যদি তার পছন্দের কলেজ না পান। পরবর্তীতে সে আবার আবেদন করতে পারবে। কোন কলেজ ভর্তিতে বাধ্য করতে চাইলে বিষয়টি যদি আমাদের জানায় আমরা ব্যবস্থা নেবো। এখন একজন শিক্ষক কম্পিউটার দোকানে কেন ঘুরে তারাই ভালো বলতে পারে।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com