গুলিতে একজনের মৃত্যু, সংঘর্ষের সময় হৃদরোগে আরেকজন

 

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটগ্রহণ চলাকালে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে উপজেলার মানিকারচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম শাওন আহমেদ (২৫)। তিনি উপজেলার ভল্লবেরকান্দি গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় আরও অন্তত দুইজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০জন। আহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্যরাও রয়েছেন। সহিংসতা হয়েছে ওই ইউনিয়নের মাতাবেরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও। এতে আহত হয়েছেন অন্তত দশজন।
এদিকে উপজেলার ভাওরখোলা ইউনিয়নের খিরারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রাথীর সমর্থকদের সংঘর্ষ চলাকালে সেখানে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একজন মারা গেছেন। তিনি খিরারচর গ্রামের মৃত মুদাফ্ফর আলীর ছেলে সানাউল্লাহ ঢালি (৬০)।
এছাড়া উপজেলার চালিয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল লতিফ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে হুমায়ুন কবিরসহ অন্তত দশজন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকারচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ১২ টার দিকে একদল বহিরাগত ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে। পুলিশ বাধা দিলে বহিরাগতদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে যশ মিয়া, শাওন আহমেদ ও নাজমুল আলম নামের তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। পুলিশসহ আহত হন অন্তত ২০ জন। একই সময়ে কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকির হোসেন ও বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হারুন অর রশিদের সমর্থকদের মধ্যেও সংঘর্ষ হয়।
মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনসালট্যান্ট মো. সালাউদ্দিন মোল্লা বলেন, শাওনের মাথার পেছনে গুলি লাগে। এরপর তিনি মারা যান। গুলিবিদ্ধ অপরদের অবস্থাও আশংকাজনক।
নিহতের বাবা মোবারক হোসেন বলেন, হারুন অর রশিদের সমর্থক হওয়ায় তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি খুনিদের ফাঁসি চান।
হারুন অর রশিদের অভিযোগ, জাকির বাহিনীর সদস্য সোহাগ ও টিপু এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলো।
তবে এ জাকির হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। তবে কারা এ ঘটনা করেছে, সেটা আমি জানি না।
মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মজিদ বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সহিংসতায় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে।
এদিকে উপজেলার ভাওরখোলা ইউনিয়নের খিরারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রাথীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে সেখানে ছিলেন খিরারচর গ্রামের মৃত মুদাফ্ফর আলীর ছেলে সানাউল্লাহ ঢালি (৬০)। এ সময় আতংকিত হয়ে মাটিতে লুটে পড়েন তিনি।
মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মজিদ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে মারা গেছেন। কারণ তিনি আতংকিত হয়ে পড়েছিলেন। এছাড়া তার শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই।
অপরদিকে উপজেলার চালিয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল লতিফ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ওই ইউনিয়নের রামপ্রসাদেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে।
সকালে কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল লতিফ ও বিদ্রোহী প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তাঁরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন আহত হন। এ সময় উভয় পক্ষের সমর্থকরা টেঁটা, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি হয়।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. মতিয়ার রহমান বলেন, কেন্দ্রের বাইরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলযোগ শুরু হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হুমায়ুন কবীর কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবার ভোট গ্রহণ শুরু হয়।