চৌদ্দগ্রামের ৫পরিবারে আহাজারি
সানোয়ার হোসেন,চৌদ্দগ্রাম।।
ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে নির্বাক বসে ছিলেন এক যুবক। নাম কাওসার। হোটেলে বাবুর্চির কাজ করেন। গত তিন বছর ধরে কিডনিজনিত সমস্যা তার, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আগামী ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অপারেশন করানোর তারিখ ছিল। এ জন্য কিস্তিতে ঋণ নিয়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আগুন লাগার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না, খবর পেয়ে এলেন কিন্তু কিছুই রক্ষা করতে পারলেন না। বের করতে পারেননি অপারেশনের জন্য রাখা টাকাগুলো। পুড়ে যাওয়া টাকার বান্ডেল গুলো দেখালেন নেড়েছেড়ে, এরপর আর কিছুই বললেন না। কাওসারের টাকা ছাড়াও পুড়েছে আমির হোসেনের ১ লাখ ৬৫ হাজার ও আলী আশ্রাফের ৩৩ হাজার টাকা।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে পাঁচ পরিবারের পাঁচটি ঘর। পুড়েছে চিকিৎসার জন্য ঋণ করে আনা নগদ টাকা। ক্ষতি ২০ লক্ষাধিক টাকার, নিঃস্ব পরিবারগুলোর ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
সরজমিন দেখা যায়, পাঁচটি ঘরের শুধু সিমেন্টের খুঁটি গুলো দাঁড়িয়ে আছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আগুনে পোড়া ঘরের আসবাবপত্র। হাড়িপাতিল, লেপ কম্বল, চাল ডাল, হাঁস মোরগসহ পোড়া সব কিছুর অবশিষ্টাংশ। আগুনে পুড়েছে আমির হোসেন, আলী আশ্রাফ, কাওসার, মৃত ইউসুফ ও হাসানের ঘর। রান্না ঘর, থাকার ঘর ও হাঁস মুরগির ঘরসহ রক্ষা পায়নি কিছুই। সব হারিয়ে বাকরুদ্ধ এই পাঁচ পরিবারের সদস্যরা।
শর্ট সার্কিটের সূত্রপাত হওয়া ঘরের আমির হোসেনে জানান, গতকাল (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আকস্মিক আগুন জ্বলতে দেখে আমরা ঘর থেকে বের হয়ে যাই। মুহূর্তেই পাশের আরো চারটি ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় কোনো ঘর থেকে বের করা যায়নি কিছুই। পরনের কাপড়ে বের হতে হয় সবাইকে।
আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেতে হুড়াহুড়ি করে বের হওয়ার সময় টিনে কাটা গিয়ে ইসমাইল হোসেন ও আরমান মিয়া নামে দুইজন আহত হন। স্থানীয়রা তাদেরকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
প্রতিবেশী আবুল কালাম বলেন, আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সাথে সাথে গ্রামবাসীরা পানি নিয়ে এগিয়ে যায়, সময়মত ফায়ার সার্ভিস ও ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু প্রবেশ পথ সরু,ঘনবসতি এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় আগুন নিভানো সম্ভব হয়নি।
চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান সুজন বলেন, আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। কিন্তু ঐ এলাকাটি ঘনবসতি, রাস্তা সরু এবং পানি স্বল্পতার কারণে আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রহমত উল্লাহ বলেন, আগুনে ৫টি ঘর পুড়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়েছি। প্রকল্প কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর জন্য পর্যাপ্ত কম্বল ও খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছি। সরকারি ভাবে আর্থিক সহায়তার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্যানেল চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, বিকেলে (১৭ ডিসেম্বর) উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) জাকিয়া সরোয়ার লিমা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোর মাঝে কম্বল বিতরণ করেন এবং তাঁদের বিস্তারিত খোঁজখবর নেন।
এদিকে ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজখবর নেন এবং নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন।
উপজেলা মহিলা দল সভাপতি গুলশান আরা পুতুল ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর সদস্যদের মাঝে নতুন পোশাক ও খাবার বিতরণ করেন।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com