প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ৬:৫১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ৩০, ২০২৩, ৬:০৪ অপরাহ্ণ
চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর আনতে গিয়ে মহিলা মেম্বার ধর্ষিত, ছয় লাখে রফাদফা
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া||
জন্মনিবন্ধনে ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর আনতে গিয়ে মহিলা মেম্বার হলে ধর্ষিত! ঘটনা প্রকাশ করতে চাইলে চেয়ারম্যান মাফ চেয়ে বিয়ে করতে সম্মত হয়ে পরে ভোল পাল্টান। এদিকে ঘটনা জানাজানির পর মহিলা মেম্বারকে তালাক দেয় তার স্বামী। শেষতক আরেক মহিলা মেম্বারের বাড়িতে বসে ছয় লাখ টাকায় হয় বিষয়টির রফাদফা। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার মূলহোতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোলাইমান সেকান্দর।
ভুক্তভোগী মহিলা মেম্বার ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা হেছে, গত ১৮ মে বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পরে একটি জন্মনিবন্ধনে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয় ওই মহিলা মেম্বারের। তিনি যোগাযোগ করলে তখন নিজ বাড়িতে অবস্থানকারী চেয়ারম্যান সোলাইমান সেকান্দর মহিলা মেম্বারকে বাসায় যেতে বলেন। সেই মোতাবেক মহিলা মেম্বার চেয়ারম্যানের বাসায় গেলে তখন বাসায় একাকী থাকায় মহিলা মেম্বার বাসায় ঢুকলে চেয়ারম্যান দরজা বন্ধ করে দিয়ে এক পর্যায়ে জোর করে ওই মহিলা মেম্বারকে ধর্ষণ করেন। এই ঘটনা প্রকাশ করে দিতে চাইলে চেয়ারম্যান সোলাইমান সেকান্দার তাৎক্ষনিকভাবে মহিলা মেম্বারের কাছে মাফ চান এবং তাকে বিয়ে করার আশ্বাস দেন। কিন্তু মহিলা মেম্বার চলে যাবার পরই চেয়ারম্যান সোলাইমান সেকান্দর ভোল পাল্টে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে ঘটনাটি মহিলা মেম্বারের পরিবারের সদস্য এবং তার স্বামী জেনে ফেলেন। এরই জেরে গত ২৫ মে ওই মহিলা মেম্বারকে তাকে তার স্বামী তালাক দেন। নিরুপায় হয়ে তিনি আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মো. ছফিউল্লাহ মিয়ার কাছে এই ঘটনার বিচার চান এবং বিয়ের দাবী করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন ওই মহিলা মেম্বার। ২৯ মে বিকেলে হাজী ছফিউল্লাহ মিয়ার অফিসে বিষয়টি নিয়ে আপোষ মিমাংসার জন্য বসলে বনিবনা না হওয়ায় সমাধান না করেই মহিলা মেম্বার চলে যায়। ওইদিন রাতেই তালশহর ইউনিয়নের মৈশাইর গ্রামের সাবিনা মেম্বারের বাড়িতে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন জয়, তালশহর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য রশিদ মেম্বার, অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. সোলাইমান সেকান্দর এবং ভুক্তভোগী ওই মহিলা মেম্বারের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসেন। সেই রাতেই ছয় লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টি জোরপূর্বক আপোষ মিমাংসা করা হয়। এই ঘটনার পর থেকেই ভূক্তভোগী ওই মহিলা মেম্বারের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে চেয়ারম্যান সোলাইমান সেকান্দরের সাথে ওই মহিলা মেম্বারের দীর্ঘদিন ধরেই প্রণয়ের সম্পর্ক ছিলো। বিভিন্ন স্থানে দু'জনের অন্তরঙ্গ অবস্থার বিষয়াসয়টি এলাকায় বেশ চাউর আছে। এসবের ধারাবাহিকতাতেই গত ১৮ মে'র ঘটনার পর সোলাইমান সেকান্দর বিয়ে করতে অস্বীকার করাতেই ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয়।
তালশহর ইউনিয়নের মহিলা সদস্য, মৈশাইর গ্রামের বাসিন্দা সাবিনা মেম্বারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তার স্বামী নূরুল আমিন সরকার মোবাইল রিসিভ করে বলেন, 'রাতে ভূক্তভোগী ওই মহিলা আমাদের বাসায় আসছিলো। সবাই বসে চা খেয়ে কথাবার্তা বলেছে। তবে টাকা দিয়ে সমাধান করার বিষয়টি আমার জানা নাই।' আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন জয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান।
তালশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সোলাইমান সেকান্দরের নিকটা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, 'ইউনিয়নের বরাদ্দ নিয়ে মেম্বারদের সাথে অনেক সময় ঝামেলা হয়। কেউ হয়তোবা ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে এমন কথা বলছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। এসব তথ্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।'
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com