উপজেলা রিপোর্টার,চৌদ্দগ্রাম ।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আল মোস্তফা গ্রুপের মালিক কর্তৃক মার্কেটিং অফিসার ভাতিজার হিসাব সংক্রান্ত ঘটনায় বৃদ্ধ চাচাকে আটক করে জোরপূর্বক স্বাক্ষরযুক্ত অলিখিত চেক গ্রহণ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার উপজেলার কনকাপৈত ইউপি কার্যালয়ের সামনে কাগাইশ গ্রামের ভুক্তভোগী বৃদ্ধ আবু তাহের মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। পুলিশও স্বীকার করেছে, আল মোস্তফা গ্রুপের মালিকপক্ষ বৃদ্ধকে হয়রানি করছে। সংবাদ সম্মেলনে বৃদ্ধ আবু তাহের ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহজাদা নীরব, তৈয়ব মোল্লা, তৈয়ব হুজুর, আবুল খায়ের, মোঃ চুট্টু, ওমর ফারুক, মোঃ শরীফ, মোঃ রকি, মোঃ সুমন, জাকির হোসেনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, আবু তাহের পাশ্ববর্তী ধোড়করা বাজারে সামান্য দোকান করে সংসার চালান। ভাতিজা আবু বক্কর ছিদ্দিক আল মোস্তফা গ্রুপে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিল। তাঁর পিতা মারা যাওয়ার পর চাকুরি ছেড়ে চলে আসে। ওই সময় কোম্পানির সকল পাওনা তৎকালীন মালিকের ভাগিনা ও চট্টগ্রাম অফিসের ম্যানেজার মোঃ ফারুক, ভাই নুর আহম্মেদ এবং আরেক অফিসার কামরুল ইসলামের উপস্থিতিতে বুঝিয়ে দেয়। কয়েকমাস পরে কোম্পানির মালিকের ভাই নুর আহম্মেদ, মার্কেটিং অফিসার কামরুল, স্থানীয় কনকাপৈত এলাকার আরও কিছু মানুষসহ গিয়ে বৃদ্ধ চাচা আবু তাহেরকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক কনকাপৈত পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আল মোস্তফা গ্রুপের লোকজন দাবি করে, ভাতিজা আবু বকর ছিদ্দিকের নিকট ২ লাখ টাকা পাবে। আবু বকর সকল কাগজপত্র দেখালেও তারা মানেনি। ততৎকালীন ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ওমর চন্দ্র, স্থানীয় ইউপি মেম্বার সরোওয়ার্দীর উপস্থিতিতে কোম্পানির লোকজন নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়। এতে তারা ভাতিজা আবু বকরের নিকট কোম্পানি ২ লাখ টাকা পাবে এবং টাকা দুই মাসের মধ্যে পরিশোধে চাপ প্রয়োগ করে। তখন আল মোস্তফা গ্রুপের মালিক মোস্তফার আপন ভাই, আ’লীগ নেতা ও কনকাপৈত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবালের রাজনৈতিক ও প্রশাসনের চাপে তখন মানসম্মান ও হয়রানির ভয়ে সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হয়। ওই সময় আবু তাহেরের নামীয় মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ধোড়করা বাজার শাখার অলিখিত স্বাক্ষর করা একটি চেক দেয়া হয় পুলিশ ওমর চন্দ্রের কাছে। চেক নং- সিডিএ১২৬৩৩৬৬, হিসাব নং-০৪২০২১০০০১৭৫৫। টাকা পরিশোধের দুই মাস সময় থাকলেও ১ মাসের মধ্যেই ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে স্থানীয় মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে কনকাপৈত ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ওমর চন্দ্রের হাতে নগদ ২ লাখ টাকা হস্তান্তর করা হয়। এসআই ওমর বিষয়টি আল মোস্তফা গ্রুপের মালিক মোস্তফার ভাই নুর আহম্মেদকে টাকা পাওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন। ওই সময় চেক চাইলে এসআই জানায়, চেকটি নুর আহম্মেদের কাছে আছে। উনি এলাকায় আসলে চেকটি ফেরৎ দিবে। কিন্তু টাকা পরিশোধের চার বছর পর জানতে পারি, আল মোস্তফা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ পলিমার এন্ড লেমি টিউবস লিঃ এর পক্ষে আব্দুল কাইয়ুম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের আদালতে বৃদ্ধ আবু তাহেরকে আসামি করে ৮ লাখ ২১ হাজার টাকা পাবে বলে মামলা দায়ের করেন।
বৃদ্ধ আবু তাহের আক্ষেপ করে বলেন, ‘আল মোস্তফা গ্রুপ আমার পাওনা চেক ফেরৎ না দিয়ে উল্টো আমার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। আমি মিথ্যাচারের বিচার চেয়ে এবং মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে সাংবাদিকদের লেখনির মাধ্যমে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানাচ্ছি।'
তৎকালীন কনকাপৈত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ওমর চন্দ্র শুক্রবার বলেন, ‘বৃদ্ধ ভুক্তভোগী। আল মোস্তফা গ্রুপের মালিক পক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল গং ইচ্ছাকৃতভাবে বৃদ্ধকে হয়রানী করছে। এটার শেষ হওয়া দরকার’।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আল মোস্তফা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তফা ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বারে বেশ কয়েকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। অপরদিকে তাঁর আপন ভাই, আ’লীগ নেতা ও কনকাপৈত ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল গত ৫ আগষ্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ রয়েছে।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com