চৌদ্দগ্রামে সাব-রেজিস্ট্রার-দলিল লেখক দ্বন্দ্বে কার্যক্রম বন্ধ

#ভোগান্তিতে দাতা গ্রহীতারা

সানোয়ার হোসেন,চৌদ্দগ্রাম।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সাব রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখক দ্বন্দ্বে বন্ধ রয়েছে দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রম। টানা ৪ কর্মদিবস পেরিয়ে গেলেও এখনো কাজে ফিরেননি চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান (অতিরিক্ত দায়িত্ব)। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দলিল দাতা, গ্রহীতা ও নকল দলিল উত্তোলনকারীসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহীতারা। কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সাব-রেজিস্ট্রারের অনুপস্থিতির তথ্য পূর্বে জানা না থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সেবা গ্রহীতারা ফিরে যাচ্ছেন কাজ না সেরে। একাধিক দলিল লেখক জানিয়েছেন, দলিল রেজিস্ট্রিতে বাড়তি টাকা দাবি করার অভিযোগে দলিল দাতারা সাব রেজিস্ট্রারের সাথে খারাপ আচরণ করেন। সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান জানান, দুই জায়গায় একসাথে দায়িত্ব পালন সম্ভব হচ্ছেনা বিধায় চৌদ্দগ্রাম অফিসে যাচ্ছি না।
সাব-রেজিস্টার অফিস সূত্রে ও সরজমিনে তাৎক্ষণিক গিয়ে জানা যায়, উপজেলার গুনবতী সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দলিল লেখক সমিতির অন্তর্ভুক্ত দলিল লেখক মোহাম্মদ হানিফ গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পৌরসভার ২২ শতক জায়গার দলিল সম্পাদনের জন্য সাব রেজিস্ট্রারের খাস কামরায় প্রবেশ করেন। এসময় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্টার মেহেদী হাসান ত্রুটিপূর্ণ কাগজ দেখে ভেন্ডার হানিফকে শতভাগ নির্ভুল দলিল নিয়ে আসতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভেন্ডারসহ দলিল গ্রহীতা পৌরসভার চান্দিশকরার মোঃ শহীদ সাব-রেজিস্টারকে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনার জেরে ১০ই ফেব্রুয়ারি (সোমবার) পর্যন্ত সাব-রেজিস্ট্রার কর্মস্থলে আসেননি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দলিল দাতা ও গ্রহীতারা।
সরজমিনে বুধবার সাব-রেজিস্টার অফিসে গিয়ে আরও দেখা যায়, ২২ শতক জায়গার কবলা দিতে আসা বুদ্দিন গ্রামের রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, ফরিদা বেগম গং জানান, ‘আমরা পূর্বনির্ধারিত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) একটি দলিল সম্পাদনের জন্য এসেছিলাম ঢাকা থেকে। কিন্তু এখানে এসে জানলাম অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় সাব-রেজিস্ট্রার অনুপস্থিত। কর্মসূত্রে আমরা সবাই ঢাকা থাকি, মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকা থেকে এসেছি, এখন দলিল সম্পাদন না করেই ফিরে যেতে হবে।’
উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের আলকরা গ্রাম থেকে আসা আবদুল মমিন বলেন, ‘টাকার জন্য জমি বিক্রি করেছি, কিন্তু আজকে সাব-রেজিস্টার না থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। জমি রেজিস্ট্রি ছাড়া ক্রেতা টাকা দিচ্ছেনা। বিপদের সময় টাকা-ই যদি না পাই তাহলে জমি বিক্রি করে কী লাভ হলো!
ঘোলপাশা ইউনিয়নের কোমাল্লা গ্রাম থেকে নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য ক্রয়কৃত জমির দলিল সম্পাদন করতে আসা ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘চাকরিসূত্রে এলাকার বাইরে থাকি। ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে। সন্তানদের তাগাদায় একটি নতুন বাড়ি করার জন্য বৃহস্পতিবার ( ০৬ ফেব্রুয়ারি) দলিল সম্পাদন করতে এসে ফিরে যাচ্ছি।’
দলিল লেখক মমিনুল ইসলাম জানান, বুধবার আমার দুইটি দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার কথা ছিল। যার একটি বন্টননামা। বন্টননামার একজন অংশীদার আগামীকাল দেশের বাইরে চলে যাবে। কয়েকজন আসছেন শহর থেকে। এমন পরিস্থিতিতে সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ।’ তিনি আরও জানান, ‘গত মঙ্গলবার আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না, তবে অফিসে এসে জেনেছি সাব-রেজিস্ট্রার স্যারের কোনো দোষ ছিল না। ঘটনাস্থলে বহিরাগত লোকজন এসে স্যারকে লাঞ্চিত করে।’
আরেক দলিল লেখক মোহাম্মদ রায়হান জানান, সাব রেজিস্ট্রারে সাথে দুর্ব্যবহারের কারণে তিনি অফিসে আসছেন না বলে জেনেছি।
দলিল লেখক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, দলিল গ্রহীতাগণের সাথে রেজিস্ট্রারের ঝামেলা হয়েছে। ঐদিন ঘটনার সময়ে সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শাহিন ও দলিল লেখক মমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছিলেন। আমাদের সাথে কোন ঝামেলা হয়নি। সম্ভবত ব্যক্তিগত কারণে তিনি (সাব রেজিস্ট্রার) আসছেন না।
তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, চৌদ্দগ্রাম সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ সবসময় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। নিজেদের সুবিধামত ইচ্ছানুযায়ী কার্য সম্পাদন না হলে তারা রামকেও রাবণ বানিয়ে ছাড়েন। সাব-রেজিস্ট্রার মেহেদী(অতিরিক্ত দায়ীত্ব) চৌদ্দগ্রাম অফিসে যোগ দেয়ার কয়েক দিনের মাথায় সমিতির নেতৃবৃন্দের দ্বারা হেনস্থার শিকার হন। ঘটনার সত্যতা জানতে গিয়ে জানা যায়, ভুল দলিল সংশোধন ব্যতিরেকে রেজিস্ট্রি না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সমিতির অন্তত দুই নেতা সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে বাজে আচরণ করেন।
অবশ্য দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শাহিন জানান, সন্ধ্যার পরে হওয়ায় ঐদিন (৪ই ফেব্রুয়ারি) আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। পরে জেনেছি। তবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে আসছেন না বলে জেনেছি।
চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান (অতি: দায়িত্ব) জানান, এখানে কাজ করার বিষয়ে মনমানসিকতা নাই। আমি ইতোমধ্যেই বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রার মহোদয়কে জানিয়েছি। আমি এখন থেকে নিয়মিত গুনবতী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালন করবো।
জেলা রেজিস্ট্রার মনিরুল হাসান বলেন, মেহেদী হাসান অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালন করছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার জনৈক দলিল লিখক ও তার দলিলের গ্রহীতা কর্তৃক মেহেদী হাসানকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে অনেকেই (সাব রেজিস্ট্রার) আসতে রাজি হচ্ছেন না। আশা করছি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।