পরিবহনে বিশৃঙ্খলায় ভোগান্তিতে যাত্রীরা
সানোয়ার হোসেন।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারণ করেছে। উপজেলা জুড়ে জনভোগান্তি বেড়েছে দ্বিগুণ। চালকরা হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া, বেড়েছে দুর্ঘটনা, জিম্মি হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা, উদাসীন সংশ্লিষ্টরা । রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শ্রমিক ও মালিক নেতৃত্বে নতুন মুখ এলেও যাত্রীদের সুবিধা কিছু হয়নি, ক্ষেত্রবিশেষে হয়েছে তার উল্টো।
যানজট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপজেলার বিভিন্ন বাজার অংশে যানজট বেড়েছে দ্বিগুণ। যানজট সৃষ্টিকারী দুই পরিবহন মদিনা ও যমুনা। এর পাশাপাশি মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ সিএনজি অটোরিকশা ও মিশুক চলাচল বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মহাসড়কে যানজট এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। যাত্রী পরিবহন করা যানগুলো প্রশাসনের নির্ধারিত স্থানে যাত্রী উঠানামা না করে জনবহুল ও ব্যস্ততম স্থানে যাত্রী উঠানামা করায় যানজট সৃষ্টি হয়। অটোরিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের দুই দিক থেকে চলাচল, মহাসড়কের দুই পাশে এলোপাথাড়ি পার্কিং, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়ানো যানে যানজটের সৃষ্টি হয়।
উপজেলা প্রশাসনের চেষ্টায়ও যাত্রী উঠানামায় নির্দিষ্ঠ স্থানে দাঁড়ানোতে বাধ্য করা যায়নি বাসগুলোকে। উল্টো চালকরা প্রতিযোগিতা লাগিয়ে মহাসড়কের মাঝামাঝি আড়াআড়ি করে রাখে বাস।
হাইওয়ে পুলিশের উপর হামলা
মহাসড়কে দায়িত্ব পালনকালে ও অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা মিশুক চলাচল বন্ধে অভিযান চালানোর সময় গত ২/৩ বছরে বেশ কয়েকবার চালকদের হামলার শিকার হয় হাইওয়ে পুলিশ। সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর চৌদ্দগ্রাম বাজারের হায়দার সুপার মার্কেটের সামনে কয়েকজন চালক একজন ট্রাফিক পুলিশকে মারধর করেন। হামলার পর যৌথবাহিনী এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এর পরদিন অটো চালকরা বাজারে পুনরায় তান্ডব চালায়, মারধর করে সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশা চালকদের।
আগস্ট পরবর্তীকালে হাইওয়ে পুলিশ বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে বেশ কয়েকবার বৈঠক করে। মিয়াবাজার হাইওয়ে থানা পুলিশের গঠন করা হয় ২৮ সদস্যের হাইওয়ে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়
পরিবহন খাতে মূল ভুক্তভোগী যাত্রীরা। উপজেলার কোথাও ভাড়া নির্ধারণে মানা হয়না কোনো নীতিমালা। ভাড়া নির্ধারণ করে চালক ও মালিকরা। অটোরিকশা চালকরা ১০০/১৫০ মিটার দূরত্বের ভাড়াও নেন ২০ টাকা। সিএনজি চালকরা ৩-৫ কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া নেন নি¤েœ ১৫০ টাকা। চৌদ্দগ্রাম বাজারে মিশুকে উঠে বসলেই ভাড়া ২০ টাকা। কার্যদিবসে চৌদ্দগ্রাম বাজার থেকে সব চাইতে বেশি যাতায়াত হয় উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্বল্প দূরত্বের এসব জায়গায় যেতে লাগে ২-৫ মিনিট, অথচ ভাড়া ২০ টাকা। এ নিয়ে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, বাকবিতন্ডায় জড়ান রাস্তায় কিন্তু চালকরা অনড়।
আবু বকর সুজন নামের এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মহাসড়কে অল্প সময়ে বেশি আয় করা যায় বিধায় পৌরসভার আশপাশের এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিকশা ও মিশুক চালকরা মহাসড়কের বাজার এলাকায় চলে আসে। এতে করে যানজট ও দুর্ঘটনা আরো বৃদ্ধি পায়।
ইঁদুর বিড়াল খেলা
মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশে দেখা যায় যানবাহন ও হাইওয়ে পুলিশের ইঁদুর বিড়াল খেলা। হাইওয়ে পুলিশ এলে মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে যায় মহাসড়ক। চলে গেলে আবার হাজির হয়ে যায় সব যানবাহন। তবে কয়েকজন চালক জানান, হাইওয়ে পুলিশের গতিবিধি লক্ষ্য রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় লোক নিয়োগ রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তারা ওইসব লোকদের কাছ থেকে কল করে তথ্য নেন। তথ্য দেয়া ওইসব লোকদের বেতন হয় চালকদের অর্থে।
তবে ডিসেম্বরের শুরু থেকে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ ও অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার সহাবস্থান দেখা গেছে। গত কয়েকদিন হাইওয়ে পুলিশের আসাযাওয়াও কমেছে।
বাজারে লাঠি, বাঁশি ও হ্যান্ড মাইক নিয়ে শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত দেখা যাচ্ছে কয়েকজন যুবককে। এদের হাতে দেখা গেছে ছোট্ট রশিদ বই।
সোমবার ১০ ডিসেম্বর চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকা পরিদর্শন করেন হাইওয়ে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের এডিশনাল ডিআইজি অপারেশনস(পূর্ব বিভাগ) মীর মোদ্দাছছের হোসেন। এ সময় তিনি পথচারী, যাত্রী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন। তিনি কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্যদের সাথে মহাসড়কে শৃঙ্খলা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন।
কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি শরীফ হাসান জানান, চৌদ্দগ্রাম বাজারে যানজট নিরসন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় শীঘ্রই পুলিশ বক্স স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com