যুক্তরাজ্যের গ্লাাসগোতে আজ ৩১ অক্টোবর ২০২১ থেকে শুরু হতে যাওয়া কপ-২৬/ জলবায়ু সম্মেলনকে প্যারিস চুক্তি পরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূণ জলবায়ু সম্মেলন হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রাক-শিল্পায়ন সময় থেকে বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য ১৯৬টি দেশ প্যারিস চুক্তিতে সম্মত হয় ছয় বছর আগে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের পথরেখা চূড়ান্ত করতে পারেনি দেশগুলো। ইতোমধ্যে তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগ থেকে ১.২ ডিগি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অধিক কার্বন নিঃসরণ বিশ^ব্যাপী ঘনঘন বন্যা, জলোচ্ছাস, ঘুর্ণিঝড় এবং দাবনলের ঘটনা বাড়িয়ে দিয়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। এমন বাস্তবতায় বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি বিশেষ করে কয়লার ব্যবহার ও রপ্তানি বেড়েছে এবং অর্থায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে কয়লাভিত্তিক জ¦ালানি প্রকল্পে। অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি প্রসারে প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রতিশ্রুত উন্নয়ন সহায়তার ‘অতিরিক্ত’ এবং ‘নতুন’ প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল হিসাবে প্রদানে জলবায়ু পরিবতনের জন্য মূখ্যত দায়ী শিল্পোন্নত দেশসমূহ ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় আলাদা কোনো তহবিল গঠন করা হয়নি। সার্বিকভাবে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে এবং জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রদত্ত অঙ্গীকার প্রতিপালনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট-জিরো’ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, কয়লার ব্যবহার সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করা, প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন প্রদান, ইনহ্যান্সড ট্রান্সপারেন্সি ফ্রেমওয়াক/বর্ধিত স্বচ্ছতা কাঠামো ও প্যারিস রুলবুক চুড়ান্ত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কপ-২৬ সম্মেলনে আলোচনা হবে। ধারণা করা হচ্ছে প্যারিস চুক্তি পরবর্তী সময়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে সমঝোতায় পৌছানোর জন্য এই সম্মেলনই শেষ সুযোগ। তাই কয়লাভিত্তিক জ¦ালানি ব্যবহার বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানি প্রসার ও প্রতিশ্রুত জলবাযু অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার উদ্যোগে আজ ৩১ অক্টোবর ২০২১ সকাল ১১ টায় কুমিল্লা প্রেস ক্লাব চত্বরে এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), প্রত্যয়, এইড কুমিল্লা, আবৃত্তি জোট, ওয়াইডব্লিউসিএসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রামপাল, মাতারবাড়ি, বাঁশখালী প্রকল্পসহ মোট ১৯টি কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক পকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে, যার বড় অংশই করা হচ্ছে উপকূলীয় জেলায়। জাপান, চীন ও কোরিয়সহ বিশে^র উন্নত দেশসমূহ এই প্রকল্পগুলোতে আর্থায়ন ও কারিগরী সহায়তা প্রদান করছে। চীন দেশের বাইরে কয়লা প্রকল্পে অর্থায়ন না করার ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নির্মাণাধীন প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের কোনো ঘোষণা দেয়নি। উলেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমনিতেই বাংলাদেশের উপকূলীয় স্থলভাগের ১১ শতাংশ তলিয়ে যাওয়ার অশঙ্কা রয়েছে। চার ও পাঁচ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ঝুঁকিও ১৩০ শতাংশ বাড়বে। এরমধ্যে উপকূলীয় জেলায় এত বিশাল সংখ্যক কয়লা প্রকল্প বন ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিবে। ফলে উপকূলীয় জেলায় বসবাসরত ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকা আরও হুমকির মুখে পড়বে।
মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম, কুমিল্লা আবৃত্তি জোট এর সাধারণ সম্পাদক আবু হাসের মানিক, সনাক সদস্য আলহাজ¦ শাহ্ মোঃ আলমগীর খান, সনাক সদস্য বদরুল হুদা জেনু, ওয়াইডব্লিউসিএ কুমিল্লা সাধারণ সম্পাদক ও সনাক সহ সভাপতি আইরিন মুক্তা অধিকারী প্রমূখ।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com