মহিউদ্দিন মোল্লা।।
চিলুয়া। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গ্রামটি ছোটখাট। তবে শতাধিক জাম গাছের জন্য এটির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে পাশের গ্রাম গুলোসহ অন্যান্য উপজেলায়। চিলুয়া মাদ্রাসার পাশের খাল পাড়ের সড়কে এই গাছ গুলো লাগানো হয়েছে। রাস্তাটি চলে গেছে বুরপৃষ্ঠ বাদমতলী বাজারের দিকে। আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জাম গাছ। যিনি পাড়তে পারেন জাম তার। চিলুয়া গ্রামের মৌলভী আবদুর রশিদ এই ভালোবাসার বীজ বুনেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়,চিলুয়া গ্রামের মৌলভী আবদুর রশিদ ১৯৯৬সালে গাছ গুলো রোপন করেন। ১০ বছর পর এগুলোতে ফল ধরতে শুরু করে। গ্রীষ্মকালে এখানে গাছে গাছে ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে পড়ে। আবদুর রশিদ ২০০৪সালে মারা যান। তিনি ও তার পরিবারের কখনও গাছের ফলের দাবি করেননি। গ্রামবাসী ও আশপাশের মানুষ তা পেড়ে নেন।
বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কিশোর তরুণরা গাছে উঠেছেন। কেউ নিচে প্লাস্টিকের অংশ মেলে ধরেছেন। যাতে এতে জাম পড়ে। কালো জামে রঙিন হয়ে উঠেছে গাছ। জামের মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশের বাতাসের গায়। এখানে জামের মৌসুমে উৎসবের হাট বসে। এদিকে পাখির দল জাম গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়া এখানে ভোর বেলায় জাম সংগ্রহের জন্য বেশি মানুষ ভিড় করেন।
পাশের বছুরিয়া গ্রামের আরমান হোসেন বলেন, এখানে গাছের ছায়ায় ভালো সময় কাটে। এছাড়া এখান থেকে জাম সংগ্রহ করি। এই গ্রামের লোকজন জাম পাড়তে বাধা দেননা।
নোয়াগাঁও গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এই গ্রামে তার নানার বাড়ি। এই সড়কের জামতলায় তার শৈশব কেটেছে। সবাই জাম সংগ্রহ করেন। যারা গাছ লাগিয়েছেন তারা কিছু বলেন না। প্রয়াত মৌলভী আবদুর রশিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
মৌলভী আবদুর রশিদের নাতি ড.আমিমুল এহসান বলেন,তার দাদা সব সময় গাছ লাগাতে পছন্দ করতেন। তিনি মনে করতেন গাছ লাগালে মানুষ ও পাখি সবাই উপকৃত হবে। দাদার পথ অনুসরণ করে আমরা কখনও কাউকে জাম নিতে বাধা দেইনি। আমরা শুধু বলেছি,গাছের ডাল যেন না ভাঙ্গে এবং তারা যেন সাবধানে গাছে উঠেন। কেউ যাতে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে আহত না হন। মৌলভী আবদুর রশিদ গাছ লাগানোসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, মৌলভী আবদুর রশিদরা এই সমাজের আলোকিত চরিত্র। এদের মতো মানুষের সংখ্যা বাড়লে সমাজ আরো এগিয়ে যাবে। তার মতো আরো মানুষ গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে আসবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।