তিন বছর ধরে ঝুলে আছে কুমিল্লার লাকসামে অবস্থিত নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়িটির সংস্কার কাজ। ২০১৯সালের ১০ এপ্রিল বাড়িটির সংস্কার কাজ শুরু হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘ফয়জুন্নেছা স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে চালুকরণের লক্ষ্যে সংস্কার-সংরক্ষণ কাজ উদ্বোধন করেন তৎকালীন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোঃ আতাউর রহমান। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
উল্লেখ্য-উপমহাদেশের একমাত্র নারী নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী। কুমিল্লার লাকসাম শহর থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পশ্চিমগাঁও-এ ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে নওয়াব ফয়জুন্নেছার বাড়ির অবস্থান। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি উন্মুক্ত জাদুঘর হিসেবে নির্মাণ ও আধুনিকায়ন করে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য বাড়ির ৪ একর ৫৩ শতক জায়গা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। লাকসামের পশ্চিমগাঁও এলাকায় ১৮৩৪ সালে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী জন্মগ্রহণ করেন। নওয়াব ফয়জুন্নেছা ছিলেন জমিদার আহমদ আলী চৌধুরী ও আরফান্নেছা চৌধুরাণীর প্রথম কন্যা। তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি বাংলা, আরবি, ফার্সি ও সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। বেগম রোকেয়ার জন্মের সাত বছর আগে ১৮৭৩ সালে এই নারী নওয়াব কুমিল্লা শহরে প্রতিষ্ঠা করেন ফয়জুন্নেছা উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়, যা বর্তমানে ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচিত। ১৯০১ সালে লাকসামে ফয়জুন্নেছা ডিগ্রি কলেজ ও বিএন হাইস্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নারী স্বাস্থ্যসেবায় তিনি ১৮৯৩ সালে নওয়াব ফয়জুন্নেছা মহিলা ওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নওয়াব ফয়জুন্নেছা ১৮৯৯ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজের নির্মাণ কাজে তৎকালে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন। এ ছাড়া দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, পুল, ব্রিজ, কালভার্ট ও মসজিদ নির্মাণ করেন। নওয়াব ফয়জুন্নেছা ছিলেন একজন সাহিত্যানুরাগী। তাঁর রচিত রূপজালাল কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৮৭৬ সালে। এ ছাড়াও ফয়জুন্নেছার সংগীতসার ও সংগীত লহরী নামে দুটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়। রানী ভিক্টোরিয়া ১৮৮৯ সালে ফয়জুন্নেছাকে ‘নওয়াব’ উপাধি দিয়েছিলেন। নারী শিক্ষার প্রসারে অনন্য ভূমিকার পরও নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীকে উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়নি। ২০০৪ সালে ফয়জুন্নেছাকে যৌথভাবে একুশে পদক দেওয়া হয়। তার জীবনী পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়িটি ‘ফয়জুন্নেছা স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে চালুকরণের লক্ষ্যে সংস্কার কাজ শুরু করে। যা আমাদের আশান্বিত করে। কিন্তু তিন বছরেও এটির কোন পূর্ণাঙ্গতা আসেনি। যা আমাদের হতাশ করছে। দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে বাড়িটি উন্মুক্ত করা হোক। এতে নতুন প্রজন্মকে নওয়াব ফয়জুন্নেছার মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারবে।
গবেষকরা বলেন, ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর স্মৃতি রক্ষায় দীর্ঘদিনের দাবির কারণে বাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের অধীনে গেছে। এতে আমরা আনন্দিত। আশা করি এটি একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে।
আমরা মনে করি,প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়িটি ‘ফয়জুন্নেছা স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে চালুকরণের জন্য আরো আন্তরিক হতে হবে। সংস্কার কাজ শেষ করে বাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। এতে নতুন প্রজন্মকে নওয়াব ফয়জুন্নেছার আদর্শ সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পারবে।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com