।। অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ।।
ডেঙ্গুজ্বরের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বমি বা (Hyperemesis Gravidarum) যা গর্ভাবস্থার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে, যা রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় রোগের ক্লিনিকেল রূপ পরিবর্তিত হওয়ায় রোগীদের হেমরেজিক ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় কিছু শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের ফলে (Haemodilution) হয়ে ডেঙ্গুর অনুষঙ্গী Platelet Count কমে যাওয়া বা Haematocrit বেড়ে যাওয়াকে প্রচ্ছন্ন করে রেখে ডেঙ্গু নির্ণয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। ফলে দেরিতে রোগ নির্ণীত হয়ে রোগী মৃত্যুর আশংকা বেড়ে যেতে পারে। ডেঙ্গুতে Platelet কমে যাওয়ার পাশাপাশি লিভার এনজাইম (ALT) বেড়ে যায়, যা গর্ভাবস্থায় ভয়াবহ জটিলতার মধ্যে অন্যতম HELLP (Hemolysis, Elevated Liver enzyme levels and Low Platelet levels) syndrome এ হয়। দুটি রোগের এ (Over lapping) বৈশিষ্ট্যও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তাই রোগ নির্ণয় করা জটিল হয়ে পড়ে।
গর্ভাবস্থায় জ্বর মানেই সংকটময় অবস্থা। তাই জ্বরের মাত্রা যতই হোক না কেন বাসায় বসে না থেকে দ্রুত হাসপাতাল ভর্তি হতে হবে।
অল্প কিছু গবেষণা হয়েছে যেখানে Cord Blood ও মায়ের বুকের দুধে এ ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে। এ ভাইরাস প্লাসেন্টা ক্রস করতে পারে। প্রসবকালীন সময়েও বাচ্চা মা থেকে আক্রান্ত হতে পারে। শুধু তাই নয় বুকের দুধের মাধ্যমেও ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মায়ের সন্তান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখুন।
গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে এ সময় যেকোন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের যে পরিবর্তন হয় তাতেও গর্ভবতী নারীরা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। সবরকম চিকিৎসা পদ্ধতি এ সময়ে প্রয়োগ করা যায় না বলে রোগের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
কয়েকবছর থেকে ডেঙ্গুজ¦রের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে শুরু করলেও এ বছর তা ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। ২০০২ সালে ডেঙ্গুর যে ধরণটি (DEN-3) অন্য ধরণ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, এখন তা আবার আবির্ভূত হয়েছে। ফলে ডেঙ্গু জ¦রে বহুলোকত আক্রান্ত হচ্ছেই, উপরন্তু বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এসময়ে গর্ভবর্তীরা সবচেয়ে বেশি Vulnerable অবস্থায় আছে। গর্ভস্থ শিশুরাও বিপদমুক্ত নয়। (সংগৃহীত)
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com