তাদের বাড়ির পাশে নতুন চারটি কবর!
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
বাড়ির পাশেই কবরস্থান। এক সারিতে চারটি নতুন কবর। মা-বাবার পর আদরের ছোট বোনকে হারিয়ে নির্বাক ছোট ভাই সোহেল। দিনভর কবরের পাশেই বসে ছিলেন। সোমবার রাত ১০টায় জানাযা শেষে মা-বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয় বোন আঁখিকে। এর এক মাস আগে বড় চাচার স্ত্রী তাহেরা আক্তার মারা যান।
মঙ্গলবার বিকেলে সোহেলের সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখা যায়, সোহেল শুণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন বোনের কবরের দিকে। কিছুক্ষণ বাবার কবর, কিছুক্ষণ মায়ের কবর আর সব শেষে বোনের কবরের পাশে বসে মাটি সমান করছে। তার মন বিশ^াস করতে চায় না বাবা-মা পর বোনও চলে গেছেন। সোহেলের ছোটবোন আঁখি আক্তার (১৭) সোমবার সকাল ৮টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
আঁখি কুমিল্লা নগরীতে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী নিহত ফরিদ মুন্সী (৫৫) ও পেয়ারা বেগম (৪৭) দম্পতির একমাত্র মেয়ে। সে দেবিদ্বার উপজেলাধীন জুবেদা খাতুন মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলো।
ভাই সোহেল বাড়িতে থেকে কৃষিকাজ করেন। তার বড় ভাই ইকবাল থাকেন বাহরাইনে। সোহেল জানান, ছোট বোনটি অনেক আদরের ছিলো। দুর্ঘটনার পর প্রবাসী বড় ভাই বারবার ফোনে বোনের খবর নিচ্ছিলেন। টাকা পয়সার চিন্তা না করে একমাত্র বোনের চিকিৎসার জন্য বলছিলেন। এখন সে বড় ভাইকে কি জবাব দেবে?
কথা বলতে গিয়ে তার গলায় কথা আটকে যাচ্ছিলো। বার বার চোখ মুচচ্ছিলেন। তার চোখে পানি দেখে উপস্থিত অন্যদেরও চোখও ভিজে উঠছিলো।
সোহেলের চাচা আবু তাহের মুন্সী জানান, এক মাসের মধ্যে আমাদের পরিবারের চারজন বাড়ির পাশের কবরস্থানে চলে গেছেন। এক মাস আগে বড় ভাই তাহের মুন্সীর স্ত্রী তাহেরা আক্তার মারা যান। পরে মেঝ ভাই,তার স্ত্রী ও ভাতিজি মারা যান।
তিনি আরো বলেন, মা-বাবার পর বোনকে হারিয়ে দুই ভাই পাগল প্রায়। আমার ভাইয়ের পরিবারটা একবারে তছনছ হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে ফুফাতো ভাই রাকিবুল ইসলামের সিএনজি অটো রিকশা যোগে সোহেলের বাবা ফরিদ মুন্সী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন চিকিৎসার জন্য। সাথে ছিলেন সোহেলের মা পেয়ারা বেগম ও একমাত্র বোন আঁখি। শাসনগাছা
রেলক্রসিংয়ে তাদের বহন করা অটো রিকশায় মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় বাবা-মা নিহত হন। গুরুতর আহত হন বোন আঁখি ও ফুফাতো ভাই রাকিবুল। রাকিবুল বর্তমানে বাড়িতে আছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়।