দুধ বিক্রি করলে বাছুর মরে  – কাবিন রেজিস্ট্রি করলে মরে বর!

 

অফিস রিপোর্টার।।

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মজিদপুর গ্রামে গাভীর দুধ বিক্রি করলে বাছুর মরে যায় আর বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি করলে বর-কনে মরে যায় এই কুসংস্কার চলছে দুইশ‘ বছরের বেশি সময় ধরে।

মজিদপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার আশোক আলী বলেন, কখনও গরুর দুধ বিক্রি করেননি, দুধ বিক্রি করলে বাছুর মারা যায়। আশোক আলীর মতো আরোও ৮০টি পরিবার গাভীর দুধ বিক্রি করেন না। এমনকি বর-কনে মারা যাবে এই কুসংস্কারে বিয়ের কাবিনও করতেন না তারা। তবে সম্প্রতি তারা বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি করান বলে জানান আশোক আলী।

মজিদপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় ১৫০টি পরিবার বসবাস করে। বেশির ভাগ পরিবারের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা। দুধ বিক্রি করতে না পারার কারণে এখন বেশিরভাগ পরিবার গাভী পালন বন্ধ করে দিয়েছি। এখন মাত্র ৩০পরিবার গাভী পালন করছে। এই সকল গাভীর যে পরিমাণ দুধ পাচ্ছে তা নিজেরা পান করে, বাকীটা স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

সাইফ খান সফর নামের এক ব্যক্তি জানান, তার বাবা গাভী পালন করলেও কখনো দুধ বিক্রি করতে দেখেননি। বাবা দাদাদের কাছ থেকে এর কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, গরুর দুধ বিক্রি করার কারণে তাদের বাছুর মারা যেতো। এই ভয়ে আমরা আজও গরুর দুধ বিক্রি করিনা। ২০০শত বছরের বেশি সময় ধরে এই নিয়ম আমাদের বংশে বিরাজমান।

মজিদপুর গ্রামের গৃহবধূ ইরন বিবি জানান, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ২৫ বছর। কখনো দেখিনি আমার শ^শুর কিংবা স্বামীকে গরুর দুধ বিক্রি করতে।
স্থানীয় ওর্য়াড মেম্বার মো. আমিন (৭৯) জানান, এই প্রথাটি তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে দেখে আসছি।

উপজেলা প্রাণী ও পশুসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবদুল মান্নান জানান, বর্তমানে এ সমস্ত কথা হল আজগুবি, যার কোন ভিত্তি নেই। তাদের এই ধারণা থেকে বের করতে হবে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত প্রক্ষিণের মধ্য দিয়ে।

তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা: রাশেদা আক্তার জানান, বিজ্ঞানের যুগে মানুষ এ ধরনের ধ্যান ধারণা পোষণ করে তা অবাক করার মতো বিষয়। তাদের আলোর পথে আনতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিষয়ে উপজেলা প্রাণী ও পশুসম্পদ কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তিনি তাদের সচেতন করার বিষয়ে কাজ করবেন।
মংঘলকান্দি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মো. নুরুল আমিন বলেন, এটি সম্পূর্ণ কুসংস্কার। তাদের ভুল পথ থেকে ফিরে আসা প্রয়োজন।