।। ইলিয়াস হোসাইন।।
এক||
জলের গর্জন,খরস্রোতা রূপ,মানুষের আতঙ্কিত মুখ;হৃদয় বিদ্ধ করে। কারো বাড়ি ভেঙে গেছে। কারো ঘরে কোমর সমান জল। যারা নিজের ভিটের মায়া ছাড়তে পারেনি তারা বাড়ির ছাদে অবস্থান করছেন। সাথে পশুপাখিও। কেউ অবস্থান নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। কিছু পরিবার কাপড় নিতে পারলেও অনেকেই খালি হাতে বের হয়েছেন। সবকিছু তাদের পানি গ্রাস করেছে। কতো স্বপ্ন বিলিন হয়েছে। কতো সচ্ছলতা বানের স্রোতে ভেসে গেছে। সবাই যেনো হাত-পা বাঁধা নিরব অসহায়। তাকিয়ে আছে স্রোতে। কখন আলো ফিরবে।
দুই||
রাস্তায় এক ভাই বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে খাবার চাইতে পারছেনা। যখন বললাম ভাই আপনারা খাবার পেয়েছেন?বললো :না ভাই! ভিতরে বাড়িরগুলোতে কেউ ঢুকছেনাতো তাই। কতো নিরব শব্দ। নিরীহ। যেনো একেবারেই হাত-পা বাঁধা। বাড়ির এরিয়া দেখে বলা যায়, অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবার। পরে তাদের পাশের বাড়ির একজন চুপে চুপে এসে বললো ভাই ওনারা সব ভাই ইঞ্জিনিয়ার।আমি বাকরুদ্ধ হলাম।
জলে বন্দিথাকা অধিকাংশ মানুষই এমন সচ্ছল পরিবারের। তাদের পরিবেশ তাই প্রকাশ করে।
তিন||
দিপ্ত, ফুহাদ, আযহার, মাহাদি, রাকিব, সিয়াম, রিয়াদ, আরিফ, সাদাত, আবির, চুয়াদ, অন্তর, অনন, কিংকর, সাইমুম ওরা তারুণ্যের প্রতীক। যে ছেলেরা কখনো জলে নামেনা। নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে রেখে তারা আজ মানুষের কল্যাণে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে দেখেছি স্ট্রং একটিভনেস,কাজের উদ্যমতা,ক্লান্তিহীন স্বস্তি,মানুষের নিবিড় ভালোবাসা। মোট কথা ওরা যেমন বিনয়ী তেমন বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কাজের প্রতি ভীষণ দৃঢ়! এমন হাজারো তরুণ মানুষের জন্য ট্রাকে ট্রাকে ছুটে আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
চার||
অনেকে না বুঝে,আঘাতহানা স্পটে না গিয়ে স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে মন্তব্য করেন। তাদের গ্রুপ ছবি, পোস্ট নিয়ে ট্রল করেন। মেয়েরা যাচ্ছে কেনো তা নিয়ে মাতামাতি করেন। ফেইসবুকে বসে বসে দিক নির্দেশনা দেন।তাদের উদ্দেশ্যে বিনয় নিয়ে বলি:আপনারা যদি স্পটে যান দেখবেন হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী তারা সবাই হাঁটু জল,গলা জল নেমে বন্দিথাকা মানুষের জন্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিশোর,তরুণ,নারী সকল বয়সী স্বেচ্ছাসেবী।এদের চোখ-মুখে তাকালে খাঁটি দেশ প্রেমিকের প্রতিচ্ছবিই দেখবেন। তারা কাজ শেষে যে স্বস্তি পায় স্মতি ধরে রাখার জন্য একটা টিম ছবি তুলে রাখেন। এ ছবিটা অন্যের প্রেরণাও জোগায়।সেটাকে পজিটিভ দৃষ্টিতেই নিলেই ট্রল করার বিষয়টি চাপিয়ে যাওয় যায়।
আর স্বেচ্ছাসেবীরা গন্তব্যে যাওয়ার আগে কি করবে,কিভাবে আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধার করবে তারা সুনিশ্চিত তথ্য সংগ্রহ করে আমরা স্পটে যাই। কেউ উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকে আবার কেউ ত্রাণ বিতরণে।এভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করে যাচ্ছেন। তাই সেচ্ছাসেবীদের পরামর্শ দিতে চাইলে অনুরোধের ভাষায় দয়া করে বলবেন,আদেশ করবেন না।কারণ সবাই স্বেচ্ছায় নেমেছে।
তাদের কাজকে প্রশংসা করুন।আপনার সুন্দর মন্তব্য,প্রশংসা স্বেচ্চাসেবীদের জন্য প্রেরণা ও সাহস।
পাঁচ||
ছবি বা ভিডিও নিয়ে অনেকে অনেক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করেন,ফেইসবুকে লিখালিখি করেন।তাদেরকে গতকালকের ঘটনা শেয়ার করছি:
এক ভাই বললো ভাই আমার কিছু ছবি তুলে দিয়েন,আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে ডকুমেন্টস হিসেবে । কারণ তারা ত্রাণের জন্য টাকা পাঠিয়েছেতো তাই প্রমাণ স্বরুপ তাদের নিকট পাঠাতে কিছু ছবি আমাকে তুলে দিয়েন। তাই কাজ করার ছবিগুলো অনেকের জন্য প্রেরণা,অনেকের জন্য প্রমাণ। এটাকে শো-আপ বলে আখ্যা না দেওয়াই ভালো। ভেবে দেখবেন আমরা যদি গণমাধ্যম কর্মী অথবা ফেইসবুকে যদি ছবি,ভিডিওর মাধ্যমে মানুষের ভোগান্তির চিত্র না তুলে ধরতাম তাহলে আপনারা তাদের কষ্টের চিত্র দেখতেননা। হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী এগিয়ে আসতোনা। তাই ছবি ভিডিও এ যুগের জন্য অনেক প্রেরণা এবং সহজে মানুষ উদ্ধারের জন্য বড় ভূমিকা পালন করে। ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে আমরা মা বোনদের প্রকাশ করিনা,মানুষের কষ্টের চিত্র তুলে ধরি। সুতরাং বিষয়টিকে সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
ছয়||
প্রবাস থেকে,দেশ থেকে। অনেকে সশরীরে নামতে পারছেন না। অর্থ দিয়ে মানুষের পাশে আছেন।স্বেচ্ছাসেবীদের সাহস,প্রেরণা,উদ্যমতা সঞ্চার করছেন।
স্কুল -কলেজ,পথ-ঘাট,গ্রাম-গঞ্জ,বাজার, বিভিন্ন শপিং মল থেকে অর্থ সংগ্রহ করছেন। হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদ ভুলে সবাই স্রোতের জলে মানুষ উদ্ধারের কাজ করছেন। এটাই আমাদের সম্প্রীতির বাংলাদেশ।
আসুন দেশকে ভালোবাসি,দেশের মানুষের চরম ভোগান্তিতে পাশে থাকি।
ভালোবাসি বাংলাদেশ।
লেখক: সংবাদকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী।