নগরীতে ১০গুণ অটোরিকশা
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
কুমিল্লা নগরীতে প্রতিদিনই বাড়ছে অটোরিকশার ধাক্কায় কিংবা উল্টে পড়ে পঙ্গু মানুষের সংখ্যা। কারো হাত কারো পা ভেঙ্গে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাইছেন নগরবাসী। তারা চান অটোরিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হোক। নিয়ন্ত্রণ করা হোক গতির। এছাড়া প্রশিক্ষণ ছাড়া যেন কাউকে যেন সড়কে অটোরিকশা নিয়ে সড়কে নামতে দেয়া না হয়।
বিভিন্ন পেশার যাত্রী,সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশের সূত্র জানায়,কুমিল্লা নগরীর যে সরু সড়ক এতে ৫হাজারের বেশি অটোরিকশা চলার অবস্থা নেই। সেখানে চলছে ৪০হাজারের বেশি অটোরিকশা। প্রতিদিনই এই রিকশার সংখ্যা বাড়ছে। এই অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের কোন কর্তৃপক্ষও নেই। ১০বছর আগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ৮হাজার পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্স দিলেও এখন তা মেয়াদ উত্তীর্ণ। তাছাড়া নগরীতে পায়ে চালিত রিকশা এখন নেই বললেই চলে। অতিরিক্ত অটোরিকশায় নগরীতে যানজট বাড়ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। কয়েক বছর আগে ডা. রিপন নামের এক নগরবাসী অটোরিকশা দুর্ঘটনায় মারা যান। গত এক সপ্তাহে দুর্ঘটনায় কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা, কুমিল্লা রূপসী বাংলা কলেজের ছাত্রী আকলিমা আক্তার নামের দুই এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পা দুই টুকেরা হয়ে যায়। আহত হন কুমিল্লা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শোয়েব সোহেল। কয়েক মাস আগে পা ভেঙ্গে যায় বৈশাখী টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসাইন ও কুমিল্লা ভাষা সৈনিক অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক মেহরুন নাহারের। কেউ হাসপাতালের বেডে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন, কেউ বাসায় স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটছেন। অন্যরা সুস্থ হলেও স্বাভাবিক জীবনে এখনও ফিরতে পারেননি। দুর্ঘটনার আতংক এখনও তাদেরকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বলেন,এইচএসসি পরীক্ষার শেষদিন দুর্ঘটনার শিকার হই। আমার পা দুই ভাগ হয়ে যায়। যেকারণে পরীক্ষা দিতে পারিনি। এতে আমার জীবনের একটি বছর নষ্ট হয়ে গেছে। এই অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ না করলে আমার মতো আরো অনেক মানুষ পঙ্গু হয়ে যাবেন।
আরেক শিক্ষার্থী আকলিমা আক্তার বলেন,পরীক্ষায় রওয়ানা করেছি। পথে অটো রিকশা উল্টে পায়ের উপর পড়ে। ভাঙ্গা পা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। ব্যথার জন্য ঠিক মতো পড়তেও পারিনি না। পরীক্ষাও তেমন ভালো হয়নি। অটোরিকশার গতি নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার।
ভাষা সৈনিক অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক মেহেরুন নাহার বলেন,সকাল বেলা। ফয়জুন্নছা স্কুলের মোড়। খালি রাস্তা। বাঁক ঘুরতে গিয়ে অতিরিক্ত গতির অটোরিকশা উল্টে গেল। চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা-ঢাকা দৌড়াদৌড়ি করছি। নিজের কলেজ,সন্তানের লেখাপড়া,পরিবার কোথাও সময় দিতে পারছি না। চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করলে এরকম দুর্ঘটনার সংখ্যা আরো বাড়বে।
সাংবাদিক আনোয়ার হোসাইন বলেন,অটোরিশা উল্টে আমার পা কয়েক ভাগ হয়ে যায়। তিন মাস বিছানায় ছিলাম। সেসব দিনের কষ্ট আর চিকিৎসা ব্যয়ের চাপ অনেক কঠিন ছিলো। এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি। অটোরিকশার সংখ্যা কমানো এবং চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়া এখন সময়ের দাবি।
ভাষা সৈনিক অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. শরিফুল ইসলাম বলেন,প্রায় প্রতিদিনই অটোরিকশা দুর্ঘটনায় মানুষ আহতের খবর শুনছি। আমাদের এক শিক্ষক ও কলেজ কেন্দ্রের দুইজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এই ভাবে একটা শহর চলতে পারে না। অটো রিকশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।
নগরীর যানজট নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য,কুমিল্লা পৌরসভার প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন,এনিয়ে আমাদের একটি কমিটি রয়েছে। এর প্রধান জেলা প্রশাসনের এডিএম। কমিটি প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগরীতে মিশুক ৫হাজার ও ছয় সিটের অটোরিকশা এক হাজার অনুমোদন দেয়া হবে। তাদের বারকোড দেয়া হবে। নগরীর আটটি প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসানো হবে। এটির বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনা ও যানজট কমবে বলে আশা করছি।
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সরওয়ার মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, অটোরিকশার অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণ মূলত সিটি করপোরেশনের কাজ। আমরা তাদের সহযোগিতা করি। মাঠে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করি। চালকদের কারো কোন লাইসেন্স নেই। সড়কে যে পরিমাণ গাড়ি চলার কথা তার থেকে ১০গুণ বেশি চলছে। চালকদের অধিকাংশ গাড়ি চালানোর নিয়ম জানেন না। তাই যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়ছে। আমরা সীমিত জনবল নিয়ে কাজ করতে হিমসিম খাচ্ছি। সিটি করপোরেশন,জেলা প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগসহ আমরা বসেছি। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার মধ্যে অটোরিকশাকে নিয়ে আসার পরিকল্পা হয়েছে। সেটি করা গেলে দুর্ভোগ কমবে বলে আশা করছি।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com