প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ৫:৪৯ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ আগস্ট ১৩, ২০২২, ৫:৫৪ অপরাহ্ণ
দেবরের নির্যাতনে দুই প্রবাসীর পরিবার গ্রামছাড়া, ঘরে ঝুলছে তালা
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জায়গা-সম্পত্তি দখলে তিন বছর ধরেই সইছে দেবরের নির্যাতন। শেষতক তাদের বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে গ্রামছাড়া করা হয়েছে দুই প্রবাসীর পরিবারকে। বাড়ি ফিরলে খুন করে লাশ গুমের হুমকি দিচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের রসুলপুর পাঁচভিটা গ্রামের বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসী লাল চান মিয়ার স্ত্রী বানু বেগম সম্প্রতি পুলিশ সুপারের কাছে এসব বিষয়ে দিয়েছেন লিখিত অভিযোগ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শ্বশুর আবু তাহের মিয়ার কাছ থেকে প্রথমে বিগত ১১ আগস্ট'২০০৯ তারিখে ৫২৪৯ নম্বর সাফ কাবলা দলিলমূলে ১৮ শতক এবং ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল'২১ তারিখে ২৬৩৪ নম্বর দলিলমূলে আরো ৫ শতক মোট ২৩ শতক জায়গা কিনেন পুত্রবধূ বানু বেগম। ক্রয়কৃত ওই জায়গায় বানু বেগমের সাথে ওই বসবাস করে আসছিলেন তার দেবর মালেশিয়া প্রবাসী আমিন মিয়ার পরিবার। গত ৪/৫ মাস আগে ক্রয়কৃত ২৩ শতক জায়গার সাড়ে তিন শতাংশে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন বানু। তখনই দেবর শাহজালাল মিয়া তার ৫/৬জন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে নির্মাণ কাজে বাঁধা দিয়ে ছয় লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। এ ঘটনায় বানু বেগম তার দেবরের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা করেন। এরই জেরে গত ২৯ জুলাই শাহজালাল আবারো তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে প্রবাসী দুই ভাইয়ের স্ত্রী বানু বেগম ও তাহমিনা বেগমকে বেধড়ক মারধর করাসসহ বানুর ঘরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে স্টিলের আলমারি থেকে দুই লাখ টাকা, তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং বানু ও তাহমিনার কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের দু'টি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেন। আহত বানু ও তাহমিনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বানুর বড় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। শাহজালাল বাড়ি ফাঁকা পেয়ে বানুর দু'টি গাভি নিয়ে যায় এবং বানু-তাহমিনার বসতঘরে ঝুলিয়ে দেয় তালা। বাড়িতে গেলে বানুকে মেরে লাশ গুম করে ফেলবে বলে গ্রামে বলে বেড়াচ্ছে শাহজালাল।
সরেজমিনে রসুলপুর পাঁচভিটা গ্রামে গিয়ে দুই প্রবাসীর পরিবারের তিনটি বসতঘরেই তালা ঝুলতে দেখা গেছে। শ্বশুরের কাছ থেকে কেনা জায়গার একটি অংশে বানুর পাকা ঘর নির্মাণের কয়েকটি পিলার চোখে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণ সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বানু বেগম বলেন, 'শ্বশুরের কাছ থেকে আমি ২৩ শতক জায়গা নিজের নামে ক্রয় করেছি, যার নামজারি খতিয়ানও আমার নামে। দেবর শাহজালালের বসতঘরও আমার কেনা জায়গায় পড়েছে। কিন্তু সে-ই এখন আমাকে ভবন নির্মাণে বাঁধা দিয়ে চাঁদা দাবী করেছে। মারধর করে আহত করেছে। পরে আমাদের বসতঘরে তালা ঝুলিয়েছে। এখন হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান ও গোষ্ঠির সর্দারের কাছে গিয়েও কোনো সহায়তা পায়নি। উল্টো তারা আমাকেই দোষারোপ করছেন। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আমি বাড়িছাড়া, আত্মীয়র বাড়িতেও প্রাণভয়ে আতঙ্কে আছি। উপায়হীন হয়ে ন্যায় বিচারের আশায় পুলিশ সুপারের কাছে দ্বারস্থ হয়েছি।' শ্বশুর আবু তাহের মিয়া বড় ছেলের স্ত্রী বানুর কাছে ২৩ শতক জায়গা বিক্রির কথা স্বীকার করেন। তবে বানু নামজারি খতিয়ানে জায়গা বেশী রেকর্ড করে নিয়েছে বলে জানান তিনি। এসময় ২৩ শতক জায়গার খতিয়ানের রেকর্ড দেখালে চুপসে যান তাহের মিয়া। তাঁরই ভাতিজা গোষ্টির সর্দার রমজান আলী মোল্লা বলেন, 'বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও বানু সাড়া দেয়নি। চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েছে। আর আমরাই তাদের ঘরে তালা ঝুলিয়েছে নিরাপত্তার জন্য। তারা থাকতে চাইলে খুলে দিব। বিষয়টি আমরা সমাধান করে দিব।'
নবীনগর থানার পরিদর্শক (ওসি) আমিনুর রশিদ বলেন, 'ঘটনার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com