নগরীতে কাউন্সিলরের পর মারা গেলেন তার সহযোগী, গুলিবিদ্ধ-৫
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেলের কার্যালয়ে ঢুকে বৃষ্টির মতো গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে তিনিসহ ২জন নিহত হয়েছেন। অপরজন হরিপদ সাহা(৫০)। ৫জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তার নগরীর পাথুরিয়াপাড়া এলাকার কার্যালয়ে এঘটনা ঘটে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রাত সাড়ে ৮টায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কাউন্সিলর সোহেল কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ছিলেন। তিনি নগরীর সুজানগর এলাকার শাহজাহান মিয়ার ছেলে। হরিপদ সাহা নগরীর সাহাপাড়া এলাকার রমনী মোহন সাহার ছেলে। আরো গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ওই এলাকার আওলাদ হোসেন রিজু, জুয়েল, রাসেল,মাজেদুল হক ও সোহেল চৌধুরী।
¯স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কয়েকজন মুখোশধারী কাউন্সিলরের পাথুরিয়াপাড়া এলাকার কার্যালয়ে প্রবেশ করে। এসময় সোহেল কয়েকজনের সাথে কথা বলছিলেন। অফিসে প্রবেশ করে মুখোশধারীরা এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। গুলিবিদ্ধ সোহেল নিজের চেয়ার থেকে ফ্লোরে পড়ে যান। গুলির শব্দ শুনে স্থানীয়রা এসে তাদেরকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এদিকে গুলিবিদ্ধদের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।
তারা আরো জানান, হামলাকারীরা পাশের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হতে পারে। চাঁদাবাজি,মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে বিরোধ চলছিল কাউন্সিলর সোহেলের। গত সপ্তাহে ওই গ্রুপের শাহ আলম নামের একজন সোহেলের এলাকায় এসে ফাঁকা গুলি করে যায়। আজ(সোমবার) তারা গুলি করে ভারত সীমান্তের দিকে চলে যায়। পাথুরিয়াপাড়া থেকে ভারতের সীমান্ত নিকটবর্তী।
কাউন্সিলর সোহেলে ভাগ্নে মোহাম্মদ হানিফ জানান, সবাই আসরের নামাজ পড়ছিল। এসময় প্রচণ্ড গুলির আওয়াজ শোনা যায়। দৌড়ে গিয়ে দেখি মামা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। আমি নিজে মামাকে কাঁধে করে বের করি।
১৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ মিয়া জানান, নেতাকর্মীদের নিয়ে কাউন্সিলর সোহেল তার কার্যালয়ে বসে ছিল। এ সময় মোটরসাইকেল নিয়ে এসে কয়েকজন সন্ত্রাসী অতর্কিত গুলি চালায়।
হামলায় আহত জুয়েল বলেন, গুলির আওয়াজ শুনে রাস্তায় বের হলে দেখি সন্ত্রাসীরা এলোপাথারি গুলি চালাচ্ছে। এ সময় আমার পায়ে গুলি লাগে। তারপর কি হয়েছে বলতে পারবো না।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, কাউন্সিলর সোহেলের শরীরে ৮টি গুলি লাগে। তার মধ্যে মাথায় ২টি, বুকে দুইটি ও বাকী চারটি গুলি লাগে শরীরের অন্য অংশে।
এদিকে ঘটনার পর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, হাজারো মানুষ পাথরিয়াপাড়া সড়কে বিক্ষোভ করছেন। র্যাব ও পুলিশ তাদের সরানোর চেষ্টা করছে। এদিকে কাউন্সিলর কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়- সোহেলের বসার স্থানে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। কার্যালয়ের চেয়ার ভাঙা। অপরদিকে হাসপাতালে নিহত আহতদের স্বজন,আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড় দেখা গেছে। দেখা গেছে স্বজনদের আহাজারি।
জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, কাউন্সিলর সোহেল মারা গেছেন বলে শুনেছি। আমরা এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন,আমি কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেলের মৃত্যুর বিষয়টি জেনেছি। স্থানীয় এমপি মহোদয়,পুলিশ সুপার সাহেবের সাথে কথা হয়েছে। সবাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। আমরা অপরাধীদের শনাক্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।