প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ১০:০৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ৩০, ২০২০, ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ
নতুন দিগন্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
উত্থান ঘটতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক (সাব রিজিওনাল কানেকটিভিটি) সড়ক যোগাযোগ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া দিয়েই যুক্ত হবে এর নেটওয়ার্ক। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতের নিমিত্তে করিডোরের অংশ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দরের সাথে আখাউড়া স্থলবন্দরকে সরাসরি সংযুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিতীয় ভারতীয় নমনীয় ঋণচুক্তির আওতায় আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়কটিকে চার লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরন প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
তিন হাজার ৫৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রকল্প মূল্যে (জিওবি ১৩১২০৮.০৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২২৫৫৭৬.৯৭ লাখ টাকা)। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২০ জুলাই একনেক বৈঠকে অনুমোদিত হয়। প্রাথমিকভাবে ২০২১ সালের ৩০ জুন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা। এর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটানের সাথে বাংলাদেশের নতুন সড়ক নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে। উপ-আঞ্চলিক করিডোর বাস্তবায়ন হলে অনেকটাই সচল হবে দেশের অর্থনীতির চাকা । বাংলাদেশের জন্য উপ আঞ্চলিক করিডোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খুব শীঘ্রই দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া দিয়ে নতুন হাইওয়ে নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। পুরোপুরি ভূমি অধিগ্রহন না করায় করোনাকালে কনসালটেন্টরা সময়মতো কাজ করতে না পারায় কিছুটা ধীরগতিতে চলছে ফোরলেন প্রকল্পের কাজ।
সংশ্লিষ্ট সুত্রমতে, ভূমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যা কেটে গেলে ও বর্ষার মওসুমের পর পরই বিভিন্ন স্থানে নতুন কার্যক্রম শুরু হবে। করোনার কারণে ভারতীয় কনসালটেন্ট ও ঠিকাদাররা সঠিক সময়ে আসতে না পারায় প্রকল্পের কাজ চলছে ধীর গতিতে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ আশুগঞ্জ নদী বন্দর থেকে ৫০. ৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এর অধীনে নির্মাণ হবে ১৬টি সেতু, দুইটি রেলওয়ে ওভারপাস, তিনটি আন্ডারপাস, ৩৬টি কালভার্ট এবং ১০টি ফুটওভারব্রীজ। তিনটি পূর্ত কাজের প্যাকেজ রয়েছে প্রকল্পটিতে। প্রথম প্যাকেজে আশুগঞ্জ নদীবন্দর হতে সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পর্যন্ত (ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের অংশ) ১২.২১১ কিলোমিটার, দ্বিতীয় প্যাকেজে সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) হতে ধরখার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পর্যন্ত (কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের অংশ) ২৭.০৫৪ কিলোমিটার এবং তৃতীয় প্যাকেজে ধরখার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) হতে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ১১.৩১৫ কিলোমিটার মহাসড়কে ধীর গতিসম্পন্ন যানবাহন চলাচলের পৃথক দুইটি লেনসহ চার লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করা হবে। প্রকল্পে অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১০৭.৫০ হেক্টর ভূমি। প্রকল্পটিতে মহাসড়ককে ফোর লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণের জন্য তিনটি পূর্ত কাজের প্যাকেজের মধ্যে দুইটি প্যাকেজের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বাকি একটি প্যাকেজের আহবান করা হয়েছে দরপত্র, যার মূল্যায়ন কার্যক্রম চলমান। বর্তমানে পূর্ত কাজের দুইটি প্যাকেজের অধীনে সার্ভে কাজ, বিভিন্ন সেতুর স্থানে মাটি পরীক্ষা ও টেস্ট পাইলিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাইলিংয়ের লোড টেস্ট কাজ চলছে। শীঘ্রই শুরু হবে মূলপাইলিং কাজ।
আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড হয়ে আখাউড়ার ধরখার দিয়ে এ সড়কটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে গিয়ে পৌঁছাবে। এরমধ্যেই এই সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও মাটি পরীক্ষণসহ প্রাথমিক সকল কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে, ধরখার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরগামী হাইওয়ে সড়কে সরকারী অর্থ হাতিয়ে নিতে নতুন নতুন ভবন ও স্থাপনা তৈরীর হিড়িক পড়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন প্রকল্পের শুরুতেই ডাটাবেজ, ভিডিও ফুটেজ ও মানচিত্র প্রস্তুত করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সরকারি অর্থ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এর কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের বাস্তব কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির আওতায় ফোরলেনের কাজটি ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যায় হবে তিন হাজার ৫শ' কোটি টাকা। ব্যায়ের ২০ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার এবং অবশিষ্টাংশ ভারত সরকার প্রদান করবে। প্রকল্পে ২৬৫ একর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও ভারতের লাইন অব ক্রিয়েটের আওতায় দুইটি প্যাকেজে এসব কাজ বাস্তবায়ন হবে। শীঘ্রই প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু কবার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিরিক্ত মুনাফার আশায় এবং সরকারি অর্থ হাতিয়ে নিতে এক শ্রেণীর লোক ধরখার-আখাউড়ার হাইওয়ের জন্য সম্ভাব্য স্থানে বাড়িঘর নির্মাণ করছে। স্থানীয়রা জানান, সড়কটি সোজাসোজি গেলে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার পাশাপাশি সরকারি অর্থের ব্যয় কমবে। এতে লাভবান হবে সরকার। আখাউড়া উপজেলা প্রশাসনের একটি সুত্র জানায়, অন্যায়ভাবে সম্ভাব্য সড়কের পাশে স্থাপনা করায় সম্প্রতি বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। তারা মুচলেকা দিয়ে গেছে। সরকারি অর্থ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে হাতিয়ে নিতে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে নেয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার শাহরুল আমিন জানান, 'বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কোন সুযোগ নেই।' জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, ভূমি অধিগ্রহনের জন্য প্রস্তাবকৃত স্থানের ভিডিও আগেই করা আছে। নুতন করে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষতিপূরণ কেউ পাবেন না।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com