# তীব্র জনবল সংকট, নেই এক্স-রে মেশিন, আবাসন সংকট
সানোয়ার হোসেন,চৌদ্দগ্রাম।।
নানামুখী সংকটে অসুস্থ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। রয়েছে ডাক্তার ও কর্মচারীদের আবাসন সংকট। মূল ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল, বিভিন্ন জায়গায় ঝরে পড়েছে পলেস্তারা। নিরাপত্তা, দূষিত পরিবেশ ও দালালদের উৎপাতে ব্যাহত স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা। উপজেলার ছয় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বর্তমানে নিজেই সংকটাপন্ন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে নিয়মিত দুর্ঘটনার রোগী আসা গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে নেই জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি ও অর্থোপেডিক্স। নেই এক্স-রে মেশিন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও আবাসন সংকট মূল সমস্যা। জনবল সংকটে সৃষ্টি হয়েছে আরো অনেক সংকট। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ৫ টি পদের বিপরীতে আছেন ১জন। যার ফলে অপরিচ্ছন্ন ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশেই রোগী দেখতে হয় ডাক্তারদের। ওয়ার্ড বয় এর ৩টি পদের মধ্যে আছেন ১ জন, আয়ার পদ শূন্য ১টি, ২ বাবুর্চির মধ্যে আছেন ১জন, ৩ অফিস সহকারীর মধ্যে নেই ২জন। নেই জুনিয়র টেকনেশিয়ান, স্টোর কিপার ও ক্যাশিয়ার। ২টি ফার্মাসিস্ট পদের মধ্যে শূন্য ১টি।
২৪ ডাক্তার ও ১১ কনসালট্যান্টের মধ্যে নেই জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, নাক কান গলা, অর্থোপেডিক্স ও চক্ষু। বেতন এখান থেকে নিলেও অর্থোপেডিক্স ও ফিজিক্যাল মেডিসিন ডাক্তার সংযুক্তিতে রয়েছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নার্স এর ৩০টি পদ থাকলেও বর্তমানে নেই ৯জন। মাঠপর্যায়ে ৮৪টি স্বাস্থ্য সহকারী পদের মধ্যে নেই ১৪জন।
বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ৮০০-১০০০ জন রোগী সেবা নেয়া প্রতিষ্ঠানটিতে নেই টিকেট অটোমেশন, এতে রোগীদের লেগে যায় লম্বা লাইন, বাড়ে ভোগান্তি। টিকেট ক্লার্কে নেই কোনো জনবল। নিরাপত্তাকর্মীর ৩টি পদের মধ্যে ২টি পদ-ই শূন্য। যার ফলে সন্ধ্যা হলেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ভিড় জমায় মাদকসেবীরা।
হাসপাতাল সূত্র আরো জানায়, প্রতি মাসে গড়ে দুর্ঘটনার রোগী আসে ১৫০-২০০ জন। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে থাকেন ৭০-৮০ জন। দোতলায় পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের নেই বারান্দা, অতিরিক্ত রোগী বাধ্য হয়ে রাখতে হয় চলাচলের পথে। প্রতি মাসে মারামারির রোগী আসে ৭৫০-৮০০ জন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে মাসে ৩৮০০-৪০০০ জন।
সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়ক থেকে ৭ ফুট নিচু জায়গায় অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অল্প বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। গত বছরের বন্যায় প্রায় ডুবে যায় ভবনের নীচতলা। এতে নষ্ট হয়ে যায় ডেন্টাল মেশিন, টিকেট অটোমেশনসহ ৭-৮ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম। ভেঙ্গে পড়েছে দরজা, জানালা। বন্যায় নষ্ট হওয়া এক্স-রে মেশিন বহু চেষ্টায়ও মিলেনি এখন পর্যন্ত।
হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পিট আছে কিন্তু সেটিও অচল। হাসপাতালের পেছনেই গর্ত করে ফেলা হয় আবর্জনা। ফাটা সুয়ারেজ লাইনে দূষিত পরিবেশ, মশার উৎপাতে স্থির থাকা দায়। কখনো কখনো পৌর কর্তপক্ষ মশক দমনে কার্যক্রম পরিচালিত করলেও এই সেবা থেকে বঞ্চিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
দোতলায় কিছু কিছু জায়গায় ঝড়ে পড়ছে পলেস্তার। নীচ তলায় ইপি আই রুমের পূর্ব পাশের দেয়াল(সমাজ সেবা রুম) ধ্বসে পড়ছে, ফাটল দেখা দিয়েছে দেয়ালে। বহির্বিভাগে নেই ডাক্তার বসার পরিবেশ। নেউ কনসালটেন্ট বসার জায়গা। একই রুমে পার্টিশন করে রোগী দেখেন ২ ডাক্তার।
স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবার প্রতিবন্ধকতার জন্য আবাসন সংকটকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবাসন সংকটের কারণে ডাক্তার ও নার্সরা থাকেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাহিরে ভাড়া বাসায়। এ কারণে জরুরী ও অন্যান্য অসুস্থ্যতায় তাৎক্ষণিক মিলেনা সেবা। দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা কোয়ার্টারে ডাক্তার না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষায় আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। ৬ টি আবাসিক ভবনের মধ্যে পরিত্যক্ত তিনটি ভবন। ডাক্তারের প্রায় সবাই থাকেন বাইরে। হাসতাপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, আবাসনে সব মিলিয়ে প্রয়োজন ৬০ ইউনিট। নার্সদের কোয়ার্টারে থাকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও কিন্তু কেউ এখানে থাকতে পারছেনা, দুই জন বসবাস অনুপযোগী ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, জনসংখ্যা বিবেচনায় এখানে প্রয়োজন ১০০ শয্যার হাসপাতাল। গত বছরের বন্যায় এক্স-রে মেশিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনটি। রয়েছে ডাক্তার ও জনবল সংকট। স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে দ্রুত প্রয়োজন সম্প্রসারিত ভবন ও চিকিৎসকদের নতুন আবাসিক ভবন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মোঃ জামাল হোসেন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অটোমেশন প্রতিস্থাপনে ইতোমধ্যে আমরা পৌরসভা থেকে আর্থিক বরাদ্দ দিয়েছি। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতার চেষ্টা করছি।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com